Home আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা অবসানের দিন জুনটিন্থ : যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে উৎসব

দাসপ্রথা অবসানের দিন জুনটিন্থ : যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে উৎসব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

১৯ জুন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। এদিন দেশটির নানা প্রান্তে রাস্তায় নামে হাজারো মানুষ, মুখর হয় সাংস্কৃতিক মঞ্চ, উচ্চারিত হয় প্রতিবাদ, গান ও প্রার্থনার ভাষা। জুনটিন্থ এখন শুধু একটি তারিখ নয়—এটি ইতিহাসের দায়, নিপীড়নের স্মৃতি ও স্বাধীনতার দাবি পূরণের অঙ্গীকার।

১৮৬৩ সালের ১ জানুয়ারি আব্রাহাম লিংকনের জারি করা মুক্তিপত্র অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে দাসপ্রথা আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত হয়। তবে বাস্তবে বহু রাজ্যে বিশেষ করে দক্ষিণের টেক্সাসে দাসেরা এই সংবাদ পাননি, বা তাঁদের মুক্তি কার্যকর হয়নি। অবশেষে ১৮৬৫ সালের ১৯ জুন, টেক্সাসের গ্যালভেস্টনে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর জেনারেল গর্ডন গ্রেঞ্জার পৌঁছে প্রায় আড়াই বছর বিলম্বে ঘোষণা করেন যে, সমস্ত দাস এখন মুক্ত। এই ঘোষণার মধ্য দিয়েই জুনটিন্থ -এর সূচনা।

২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জুনটিন্থ -কে ফেডারেল ছুটির দিন হিসেবে স্বীকৃতি দেন, যা ছিল যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের এক বড় বিজয়। তবে এই স্বীকৃতির বহু আগেই আফ্রিকান-আমেরিকান জনগোষ্ঠী দিনটি নিজেদের সংস্কৃতি, স্বাধীনতা ও সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে পালন করে আসছিল।

বুধবার, জুনটিন্থ উপলক্ষে নিউইয়র্ক, শিকাগো, হিউস্টন, আটলান্টা, লস অ্যাঞ্জেলেসসহ প্রায় প্রতিটি বড় শহরেই আয়োজন করা হয় র‍্যালি, মিছিল, গসপেল সংগীতানুষ্ঠান, প্রাচীন আফ্রিকান ঐতিহ্যভিত্তিক নৃত্য, সাহিত্য পাঠ এবং আলোচনাসভা। অনেক শহরে স্কুল ও পাঠাগারে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ ইতিহাস-আলোচনার কর্মশালা, যেখানে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা হয় যুক্তরাষ্ট্রের দাসপ্রথার ভয়াবহ বাস্তবতা ও মুক্তির দীর্ঘ পথ।

ওয়াশিংটন ডিসিতে আয়োজিত জাতীয় অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, “ জুনটিন্থ হলো আমাদের দেশীয় ইতিহাসের এক গভীর ও অপ্রিয় সত্যকে স্বীকার করার দিন। এটি শুধু অতীত নয়, বর্তমানেও আমরা কতটা সমানাধিকার নিশ্চিত করেছি, তা পরিমাপ করার দিন।”

হিউস্টনের এক অংশগ্রহণকারী বৃদ্ধা নারী বলেন, “আমার দাদি ছিলেন দাসত্বের শিকার। জুনটিন্থ মানে আমার জন্য মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়ার অধিকার। আমরা আজও পুরোপুরি মুক্ত হতে পারিনি—কিন্তু এই দিনটি মনে করিয়ে দেয়, আমরা চলতে পারি।”

তবে জুনটিন্থ উদযাপন শুধু আনন্দ নয়। অনেক স্থানেই আয়োজিত হয় বর্ণবাদ, পুলিশি সহিংসতা ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ। তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য, যারা দিনটির ঐতিহাসিক গুরুত্বকে আধুনিক সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নের সঙ্গে মিলিয়ে দেখছে।

একজন তরুণ বক্তা বলেন, “আমরা আজ স্বাধীনতা উদযাপন করছি, কিন্তু চাকরির বাজারে বৈষম্য, শিক্ষায় সুযোগের ঘাটতি ও পুলিশের গুলিতে নিহত কৃষ্ণাঙ্গদের পরিবার এখনও ন্যায়ের জন্য লড়ছে। জুনটিন্থ শুধু অতীত নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্যও আমাদের সংকল্প।”

 জুনটিন্থ এখন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে সংহতি, প্রতিবাদ ও সংস্কৃতির মিলনস্থল। এটি মনে করিয়ে দেয়, স্বাধীনতা একটি চলমান প্রক্রিয়া যা কেবল ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং প্রতিদিনের জীবনে তা বাস্তবায়নের সংগ্রাম।