আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইরানের ইসলামি রেভল্যুশনারি গার্ডের (আইআরজিসি) সর্বোচ্চ প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি আজ ইসরায়েলের এক পাল্টা বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন। হামলাটি চালানো হয় তেহরানে আইআরজিসি সদর দপ্তরে, যেখানে একযোগে কয়েকটি স্থানে বিস্ফোরণ ঘটে। নিহত হয়েছেন আরও অন্তত দুইজন উচ্চপর্যায়ের পারমাণবিক বিজ্ঞানী, আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এবং আইআরজিসি’র নিজস্ব বার্তায় সালামির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আইআরজিসি’র নেতৃত্বে থাকা হোসেইন সালামিকে মনে করা হতো ইরানের সামরিক ও কৌশলগত শক্তির অন্যতম প্রধান রূপকার হিসেবে। ২০১৯ সাল থেকে তিনি এই দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
ঘটনার পরপরই ইরান এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা এই হত্যার উপযুক্ত জবাব দেবে। প্রতিশোধ হবে দ্রুত, নির্দয় এবং সুনির্দিষ্ট।” ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেই এক শোকবার্তায় সালামিকে ‘শহীদ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং দেশজুড়ে তিনদিনের শোক ঘোষণা করেছেন।
তেহরানজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, কারণ এই হামলা সরাসরি রাজধানীর ওপর এবং একটি সামরিক স্থাপনায় চালানো হয়। ইসরায়েল এই হামলার দায় স্বীকার না করলেও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এটি ছিল একটি “সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক সামরিক অভিযানের” অংশ, যার নামকরণ ছিল “অপারেশন রাইজিং লায়ন”। লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলিকে দুর্বল করা।
সালামির পাশাপাশি যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিশিষ্ট পারমাণবিক বিজ্ঞানী ফেরেদুন আব্বাসি-দাভানি এবং মোহাম্মদ মেহদি তেহরানচি। ধারণা করা হচ্ছে, এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল শুধু সামরিক ক্ষমতা নয়, ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পেও ধাক্কা দেওয়া।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমরা পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং পার্টনারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনায় এ ঘটনা একটি মোড়বদলের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সালামির মতো একজন রণকৌশলবিদ ও রাজনৈতিক প্রতিভার অপমৃত্যু শুধু ইরান নয়, গোটা অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্যে প্রভাব ফেলবে।
তেল বাজারে ইতোমধ্যে উত্তেজনার ছাপ পড়েছে। দাম বেড়েছে ব্যারেলপ্রতি ৬ ডলার। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, পারস্য উপসাগর ও হরমুজ প্রণালীতে সামরিক উত্তেজনা বাড়তে পারে, যা বিশ্ব জ্বালানি সরবরাহে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
ইরান ইতোমধ্যে প্রতিশোধের বার্তা দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে থাকা তার মিত্র সংগঠনগুলোকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং সহিংসতার আশঙ্কা আরও প্রবল হয়ে উঠেছে।