বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে চাঞ্চল্যকর মা ও মেয়েকে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। চুরির সময় হাতেনাতে ধরা পড়ার ক্ষোভ এবং নিজেকে বাঁচাতে গৃহকর্ত্রী ও তার কিশোরী মেয়েকে নৃশংসভাবে খুন করেন গৃহকর্মী আয়েশা। ঘটনার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঝালকাঠি থেকে মূল হত্যাকারী আয়েশা (২০) ও তার স্বামী রাব্বি শিকদারকে গ্রেপ্তার করেছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার চরকয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত মালামাল ও হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে।
লোমহর্ষক জবানবন্দি: যেভাবে ঘটে হত্যাকাণ্ড
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘটনার দিন আয়েশা বাসা থেকে মালামাল চুরি করে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে গৃহকর্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) তাকে ধরে ফেলেন। চুরির অপবাদ ও পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখালে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আয়েশা।
লায়লা আফরোজ পুলিশকে ফোন করতে গেলে আয়েশা সঙ্গে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকেন। মায়ের আর্তচিৎকার শুনে ঘুম ভেঙে ড্রয়িংরুমে ছুটে আসেন মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিয়া (১৫)। চোখের সামনে মায়ের রক্তাক্ত দেহ দেখে তিনি স্তম্ভিত হয়ে যান। সাক্ষী না রাখতে আয়েশা তখন কিশোরী নাফিসাকেও উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন। মৃত্যু নিশ্চিত করার পর সন্দেহের ঊর্ধ্বে থাকতে আয়েশা ওই বাসা থেকে স্কুল ড্রেস পরে পালিয়ে যান।
গ্রেপ্তার ও আলামত উদ্ধার
মোহাম্মদপুর জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রযুক্তির সহায়তা ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। আয়েশা ও তার স্বামী নলছিটিতে আয়েশার দাদা-শ্বশুরের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়:
৬ ভরি স্বর্ণালংকার
একটি ল্যাপটপ
একটি মোবাইল ফোন
হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ধারালো ছুরি
আসামিদের আজই ঢাকায় এনে আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঘটনার প্রেক্ষাপট ও সুরতহাল রিপোর্ট
এর আগে গত সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি ১৪ তলা ভবনের সপ্তম তলার ফ্ল্যাট থেকে লায়লা আফরোজ ও তার মেয়ে নাফিসার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সুরতহাল প্রতিবেদনে ভয়াবহ নৃশংসতার চিত্র উঠে এসেছে। লায়লা আফরোজের শরীরে প্রায় ৩০টি এবং মেয়ে নাফিসার শরীরে ৪টি গভীর ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
এই জোড়া খুনের ঘটনাটি মোহাম্মদপুর এলাকাসহ সারাদেশে গভীর আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল। হত্যাকারী গ্রেপ্তার হওয়ায় নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।










