বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে এক নারীকে অপহরণ, নির্যাতন, হত্যাচেষ্টা এবং জোরপূর্বক পুনঃবিবাহে বাধ্য করার অভিযোগে সাবেক স্বামী, সৎভাই, রাজনৈতিক নেতা ও আরও বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
ভুক্তভোগী শিফাত সুলতানা মিম (২৭), জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সমন্বয় কমিটির সদস্য। বুধবার (১৬ জুলাই) তিনি কামরাঙ্গীরচর থানায় মামলাটি করেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০২৫ সালের ৪ জুলাই রাতে ‘জুলাই আন্দোলনের’ স্মরণে আয়োজিত একটি প্রদর্শনী মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিম। রাত ১০টার দিকে শেখ জামাল স্কুলসংলগ্ন এলাকায় পৌঁছানোর পরপরই তার সাবেক স্বামী শরিফুল ইসলাম জুয়েল মোটরসাইকেলে সঙ্গীদের নিয়ে উপস্থিত হয়ে তাকে ঘিরে ধরে। এরপর মিমের সৎভাই সাইফুল ইসলাম আরও কয়েকজনকে নিয়ে এসে তাকে জোরপূর্বক একটি অটোরিকশায় তুলে নিজামবাগের একটি বাসায় নিয়ে যায়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ২০–২৫ জনের সামনে শরিফুল ও তার বাবা আবুল হাশেম এক কাজী এনে জোর করে মিমকে পুনঃবিবাহে বাধ্য করতে চায়। রাজি না হওয়ায় তাকে হাত-পা বেঁধে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। এতে তার বাম পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি ভেঙে যায়, বাম চোখ মারাত্মকভাবে জখম হয় এবং শরীরজুড়ে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, তাকে হত্যা করে লাশ গুমের পরিকল্পনাও করা হয়েছিল। অভিযুক্ত সঞ্জয় কর্মকার ওরফে বাবু, যিনি কোতোয়ালি থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা, মোবাইল ফোনে হত্যার নির্দেশ দেন। এ সময় মোসা. আমেনা নামের এক নারী বস্তা এনে রাখেন, যাতে করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া যায়।
ভুক্তভোগী জানান, তাকে সাদা কাগজ ও স্ট্যাম্পে জোর করে স্বাক্ষর করানো হয়। পরদিন গোপনে বন্ধুদের কাছে ভয়েস মেসেজ পাঠিয়ে সাহায্য চান। বন্ধুরা প্রশাসনের সহায়তা চাইলে আসামিরা তাকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়। ৭ জুলাই সকালে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে থানায় গিয়ে আশ্রয় নেন এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
চিকিৎসা শেষে আত্মীয়দের সঙ্গে পরামর্শ করে মামলা করতে কিছুটা দেরি হয় বলে জানিয়েছেন মিম।
মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন শরিফুল ইসলাম জুয়েল, সাইফুল ইসলাম, আবুল হাশেম, সঞ্জয় কর্মকার ও আমেনা। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ২০–২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম জানান, মামলা হয়েছে, তদন্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।