বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় রফতানি খাত টেক্সটাইল শিল্প ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। রফতানি কমে যাওয়া, কারখানা বন্ধ এবং উৎপাদন ব্যয়ের লাগামছাড়া বৃদ্ধির কারণে দেশের অর্থনীতি নতুন করে বিপর্যয়ের মুখে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পাকিস্তান টেক্সটাইল কাউন্সিল (পিটিসি) জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পণ্য রফতানি ৩.৮৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৭.৬১ বিলিয়ন ডলারে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৭.৯১ বিলিয়ন ডলার। শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই রফতানি আয় কমেছে ১১.৭১ শতাংশ, যা গত ছয় মাসের মধ্যে পাঁচবার রফতানি সংকোচনের রেকর্ড।
এদিকে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতিও আরও বড় হয়েছে। প্রথম প্রান্তিকে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯.৩৭ বিলিয়ন ডলারে, যা গত বছর ছিল ৭.০৫ বিলিয়ন ডলার। আমদানি বেড়েছে ১৩.৪৯ শতাংশ।
ব্যয় সংকটে কারখানা বন্ধ
সংকটের ফলে একের পর এক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি গুল আহমেদ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড তাদের রফতানি পোশাক ইউনিট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, উচ্চ উৎপাদন ব্যয়, করনীতির পরিবর্তন এবং আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পারায় তারা এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। হাজারো শ্রমিকনির্ভর এ খাতের এমন বন্ধ হয়ে যাওয়া টেক্সটাইল শিল্পের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরছে।
কারাচি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (কেসিসিআই) সাবেক সভাপতি জাভেদ বিলওয়ানি বলেন, “দেশজুড়ে আরও অনেক টেক্সটাইল ইউনিট বন্ধ হওয়ার পথে। সরকার নীতিনির্ধারণে প্রকৃত অংশীদারদের পাশ কাটিয়ে অপ্রাসঙ্গিক লোকদের সঙ্গে আলোচনা করছে।”
তিনি আরও জানান, কেসিসিআই একাই দেশের ৫৪ শতাংশ রফতানি এবং ৬৬ শতাংশ কর রাজস্বে অবদান রাখলেও তাদের মতামত নেওয়া হয় না। অবকাঠামোগত দুর্বলতা, পানির সংকট, আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বেশি বিদ্যুতের দাম রফতানি খাতকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছে।
এক্সপোর্ট ফ্যাসিলিটেশন স্কিম (ইএফএস) বাতিলের প্রভাব
পিটিসি চেয়ারম্যান ফাওয়াদ আনোয়ারসহ শিল্প নেতারা জানিয়েছেন, হঠাৎ করে এক্সপোর্ট ফ্যাসিলিটেশন স্কিম (ইএফএস) বন্ধ করে দেওয়া শিল্পখাতের জন্য মারাত্মক ধাক্কা হয়েছে। জাভেদ বিলওয়ানি বলেন, “স্কিমটি বাতিল না করে দুর্বলতা দূর করা উচিত ছিল। এতে রফতানি খাত টিকে থাকার সুযোগ পেত।”
শিল্পপতি জুবায়ের মোতিওয়ালা বলেন, “রফতানি ধস সরাসরি ইএফএস বন্ধ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে যুক্ত। গুল আহমেদের রফতানি ইউনিট বন্ধ হওয়াও এরই ফল।”
বহুজাতিক কোম্পানির প্রস্থান
সংকট কেবল টেক্সটাইলেই সীমাবদ্ধ নয়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রোক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল, মাইক্রোসফট, শেল, টোটাল এনার্জিস, ফাইজার, সানোফি ও কারিমের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান পাকিস্তান থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে বা কমিয়ে দিয়েছে।
জরুরি সংস্কারের আহ্বান
পাকিস্তান টেক্সটাইল কাউন্সিল সরকারকে চার দফা সংস্কারের সুপারিশ করেছে—
১) রফতানিমুখী শিল্পের জন্য আঞ্চলিক প্রতিযোগিতামূলক ও পূর্বনির্ধারিত জ্বালানি মূল্য (আরএলএনজি ও বিদ্যুৎ) নির্ধারণ।
২) কর সংস্কার, যার মধ্যে রয়েছে স্বয়ংক্রিয় ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রিফান্ড ও ইএফএসে ইনপুট জিরো-রেটিং।
৩) রফতানি অর্থায়নের সুযোগ বাড়ানো, যেমন এক্সিম ব্যাংক শক্তিশালীকরণ এবং এক্সপোর্ট ফাইন্যান্স ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সুবিধা সম্প্রসারণ।
৪) মাসিক কর্মক্ষমতা সূচক (কেপিআই) দিয়ে স্বচ্ছভাবে পর্যবেক্ষিত নীতি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।
পিটিসি চেয়ারম্যান সতর্ক করে বলেছেন, “যদি জরুরি পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে রফতানিমুখী ইউনিটগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে যাবে। বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাবে। এতে কর্মসংস্থান হারানো ছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার আয় মারাত্মকভাবে কমে যাবে, যা পাকিস্তানের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়াবে।”