কৃষ্ণা বসু, কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ফের দিগন্তজোড়া উত্তেজনা। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন সামনে রেখে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) এবং প্রধান বিরোধী শক্তি ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এখন থেকেই জনমত দখলে মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
বর্তমান চিত্র
২০১১ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গ শাসন করছে তৃণমূল কংগ্রেস। ২০২১ সালের নির্বাচনে দলটি প্রায় ৪৮ শতাংশ ভোট পেয়ে ২১৫টি আসন নিশ্চিত করে। অন্যদিকে বিজেপি প্রায় ৩৯ শতাংশ ভোট ভাগ নিয়ে ৭৭টি আসন দখল করে রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়।
গত পাঁচ বছরে রাজ্যে দুর্নীতি ও নিয়োগ কেলেঙ্কারি বিশেষত স্কুল সার্ভিস কমিশনের চাকরি কেলেঙ্কারি রাজনীতি উত্তপ্ত করেছে। এর প্রভাবে শিক্ষিত তরুণদের ক্ষোভ তীব্র হলেও তৃণমূল এখনও জনভিত্তি ধরে রাখতে পেরেছে উন্নয়নমূলক প্রকল্প ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার কারণে।
বিজেপির কৌশল
বিজেপি রাজ্য দখলের লক্ষ্য নিয়ে সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প, চাকরি ও নিরাপত্তা ইস্যু, এবং তৃণমূলের দুর্নীতি-বিরোধী প্রচারণাকে হাতিয়ার করে বিজেপি জনমত টানতে চাইছে। দলটি হিন্দু ভোটব্যাংকে বাড়তি জোর দিচ্ছে। তবে মুসলিম ভোটের বড় অংশ এখনও তৃণমূলের অনুকূলে থাকায় বিজেপির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
তৃণমূলের পাল্টা লড়াই
তৃণমূল ‘বাংলার অনুভূতি’, ভাষাগত পরিচয় ও সাংস্কৃতিক আবেগকে সামনে এনে বিজেপির ধর্মভিত্তিক রাজনীতির জবাব দিচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভরসা হয়ে উঠেছেন। পাশাপাশি তিনি উন্নয়ন প্রকল্প, ভর্তুকি ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি দিয়ে সাধারণ মানুষের আস্থা ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।
তৃতীয় ফ্যাক্টর
কংগ্রেস ও বামদল মিলিতভাবে একটি সেকুলার জোট গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে ২০২১ সালের মতোই ভোট ভাগাভাগি হলে তৃণমূলের সুবিধাই বেশি হতে পারে।
সম্ভাবনা
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন—
তৃণমূল কংগ্রেস আগামী নির্বাচনে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে, তবে কিছু আসন হারাতে হতে পারে।
বিজেপি যদি তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও বেকারত্ব ইস্যুকে আরও জোরালো করে তুলে ধরতে পারে, তবে রাজ্যে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারে।
তৃতীয় শক্তি হিসেবে কংগ্রেস-বাম জোট যদি কার্যকরী সমন্বয় গড়ে তোলে, তবে ভোটের অঙ্কে নতুন সমীকরণ দেখা দিতে পারে।
সব মিলিয়ে ২০২৬ সালের নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে শুধু দলীয় নয়, আদর্শিক লড়াই হিসেবেও সামনে আসবে। তৃণমূলের উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ বনাম বিজেপির জাতীয়তাবাদ ও দুর্নীতি-বিরোধী প্রচার—এই দুই স্লোগানের সংঘর্ষই শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ করবে কোন দল আগামী পাঁচ বছর রাজ্যের মসনদ দখল করবে।










