Home আবহাওয়া তেঁতুলিয়ার হিমেল নিঃশ্বাস: হিমালয়ের পদতলে থমকে গেছে জীবন

তেঁতুলিয়ার হিমেল নিঃশ্বাস: হিমালয়ের পদতলে থমকে গেছে জীবন

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, পঞ্চগড়: মাঘের আগেই বুঝি জাঁকিয়ে বসেছে পৌষের শীত। উত্তরাঞ্চলের শেষ সীমানায়, হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় প্রকৃতি যেন এক শুভ্র, হিমেল চাদর মুড়ি দিয়েছে, যেখানে ঠান্ডা বাতাস আর মেঘের আলস্যে থমকে গেছে দৈনন্দিন জীবন। তাপমাত্রার পারদ নেমেছে মৌসুমের সর্বনিম্ন স্তরে, যা জানান দিচ্ছে শীতের এক দীর্ঘ ও তীব্র আগমনী বার্তা।

তেঁতুলিয়া প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সারা দেশের মধ্যে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এর তিন ঘণ্টা আগেও, সকাল ৬টায়, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই সময়ে বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৭৯ শতাংশ, যা শুষ্ক ঠান্ডা হাওয়াকে আরও বেশি তীব্র ও তীক্ষ্ণ করে তুলেছে।

ভোরের কুয়াশা: প্রকৃতির নির্মম অলঙ্কার

ভোরের আকাশ ঢেকে আছে ঘন কুয়াশার আবরণে। কুয়াশার এমন পুরু স্তর ভেদ করে সূর্যের আলো মাটিতে পৌঁছাতে দেরি করে। সকালে যদিওবা সূর্যের দেখা মেলে ঝলমলে রূপে, কিন্তু সেই তেজ যেন এক প্রতারণা মাত্র। উত্তাপহীন সেই রোদ কেবল দৃষ্টির আরাম দেয়, কিন্তু শীতের কামড় থেকে মুক্তি দিতে পারে না। পঞ্চগড়ের আশপাশের জেলাগুলিতেও কয়েকদিন ধরে হিমালয়ের হিমেল হাওয়ার ছোঁয়ায় ঠান্ডা তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে। বিকেল চারটা বাজতে না বাজতেই সূর্য নিজেকে লুকিয়ে ফেলে, আর শুরু হয় সাইবেরিয়ান হাওয়া ও হিমেল বাতাসের দাপট।

দিনের অধিকাংশ সময়, বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত, তেঁতুলিয়ার পরিবেশ থাকে স্তব্ধ ও শীতল। নদীতীরবর্তী অঞ্চলে শীতের তীব্রতা আরও বাড়ে, শিশির বিন্দু জমতে থাকে সবুজ ঘাসের ডগায়, যা দূর থেকে দেখতে মনে হয় প্রকৃতি যেন মুক্তো দিয়ে অলঙ্কার পরেছে—যদিও এই সৌন্দর্য স্থানীয় মানুষের জন্য নিয়ে আসে চরম দুর্ভোগ।

নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন সংগ্রাম

রাত ও সকালের এই তীব্র ঠান্ডা গ্রাম-গঞ্জের মানুষকে বাধ্য করেছে শীতের পোশাকের আরও গভীরে আশ্রয় নিতে। গত কয়েকদিন ধরেই শীতের তীব্রতা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষজন।

যাঁরা দিনমজুর, রিকশা বা ভ্যানচালক কিংবা ক্ষেতে কাজ করেন, তাঁদের জন্য ভোরবেলা জীবিকার সন্ধানে বের হওয়া এক চরম পরীক্ষা। খড়কুটো জ্বালিয়ে সামান্য উষ্ণতার চেষ্টা বা পুরোনো, জীর্ণ কম্বল মুড়ে ঠান্ডার কামড় থেকে বাঁচার এই সংগ্রাম এখানকার শীতকালীন জীবনের এক পরিচিত দৃশ্য। তাদের কাছে উষ্ণতার উপকরণ সংগ্রহ করা এবং ঘন কুয়াশার মধ্যে দীর্ঘ সময় কাজ করা প্রতিবারের শীতের মতোই কঠিন চ্যালেঞ্জ।

অন্যদিকে, এই ঠান্ডা জনস্বাস্থ্যেও ফেলছে গভীর প্রভাব। শিশু ও বয়স্করা সর্দি, কাশি ও শ্বাসতন্ত্রের সমস্যায় ভুগছে। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে, যা স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে।

তেঁতুলিয়ার এই তাপমাত্রা যেন প্রকৃতির এক নির্মম বার্তা—যা একদিকে হিমালয়ের নৈকট্যের এক দুর্লভ অভিজ্ঞতা দেয়, অন্যদিকে এই জনপদের জীবনযাত্রাকে করে তোলে আরও বেশি কঠিন ও সংগ্রামমুখর। উষ্ণতার অভাবে মানুষের জীবন-সংকট এবং প্রকৃতির এই অমোঘ লীলার চিত্রই ফুটে উঠেছে তেঁতুলিয়ার এই শীতকালের হিমেল নিঃশ্বাসে।