Home Second Lead মার্কিন অর্থনীতির টানাপোড়েনে তেলের বাজারে অস্থিরতা

মার্কিন অর্থনীতির টানাপোড়েনে তেলের বাজারে অস্থিরতা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম আবারও নিম্নমুখী । ওপেক প্লাস (OPEC+) জোটের সম্ভাব্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারের পরিসংখ্যান প্রকাশের পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এবং এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে তেলের দামে।

 বাজার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ২ দশমিক ৮৩ শতাংশ কমে নেমে এসেছে ৬৯ দশমিক ৬৭ ডলারে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) অপরিশোধিত তেলের দর ১ দশমিক ৯৩ ডলার কমে দাঁড়িয়েছে ৬৭ দশমিক ৩৩ ডলারে। এটি গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে বড় একদিনের দরপতন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ওপেক প্লাস জোটের মধ্যে আলোচনা চলছে চলতি আগস্ট মাস থেকে দৈনিক উৎপাদন ৫ লাখ ৪৮ হাজার ব্যারেল পর্যন্ত বাড়ানো নিয়ে। যেখানে পূর্বনির্ধারিত উৎপাদন বৃদ্ধির হার ছিল দৈনিক ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল। যদি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয় তাহলে বাজারে সরবরাহ অনেক বেড়ে যাবে এবং  দাম আরও কমতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারেও খারাপ আভাস পাওয়া গেছে।  জুলাই মাসে দেশটিতে মাত্র ৭৩ হাজার নতুন চাকরি সৃষ্টি হয়েছে, যা বিশ্লেষকদের প্রত্যাশিত সংখ্যা থেকে অনেক কম। এতে বোঝা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক গতি মন্থর হয়ে পড়ছে। আর অর্থনীতির গতি কমে গেলে তেলের ব্যবহার এবং চাহিদাও স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পায়।

বিশ্ববাজারে তেলের দরপতনের আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে বাণিজ্যসংক্রান্ত অনিশ্চয়তা। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে আমদানি শুল্ক আরোপ এবং বৈদেশিক বাণিজ্যনীতি ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনার ফলে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যিক আস্থা কমে গেছে। অনেক দেশ নিজেদের আমদানি-রপ্তানি কাঠামো পুনর্বিন্যাসের চেষ্টা করছে, যার প্রভাব পড়ছে জ্বালানি চাহিদায়ও।

বিশ্ব অর্থনীতি এখন এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, মন্দার শঙ্কা এবং উৎপাদন খাতে সংকোচন দেখা দিচ্ছে। একদিকে উৎপাদন ব্যয় কমাতে গিয়ে কোম্পানিগুলো কম জ্বালানি ব্যবহার করছে, অন্যদিকে ভোক্তারাও ব্যয় সাশ্রয়ের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়ার এই প্রবণতা তেলের বাজারকে আরও চাপে ফেলছে।

ওপেক প্লাস বাজার স্থিতিশীল রাখতে অতীতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও এবার তাদের উৎপাদন বাড়ানোর চিন্তা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে যখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে চাহিদা কমে যাওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলছে, তখন এই উৎপাদন বৃদ্ধি অনেক বিশ্লেষকের কাছে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নয় বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের একটি বড় অংশ মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে যদি ভবিষ্যতে উৎপাদন হ্রাস পায় এবং গ্লোবাল ডিমান্ড সামান্য বাড়ে, তবে আগামী বছর তেলের বাজারে ভারসাম্য ফিরে আসতে পারে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে কোনো রাজনৈতিক উত্তেজনা কিংবা বড় ধরনের জ্বালানি সংকট দেখা দিলে বাজার আবারও উর্ধ্বমুখী হতে পারে।

তবে আপাতত তেলের বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহের ভারসাম্যহীনতা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে মূল্যপতনের প্রবণতা বজায় থাকবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা এখন ওপেক প্লাসের পরবর্তী সিদ্ধান্ত এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি কোন পথে এগোয়, তার দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন।