বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৪ শতাংশের বেশি নিয়ন্ত্রণ করে তৈরি পোশাক খাত। ২০২৫ সালে এই শিল্পটি যেমন বৈশ্বিক অস্থিরতার শিকার হয়েছে তেমনি অভ্যন্তরীণ দৃঢ়তায় নিজের অবস্থানও জানান দিয়েছে।
১ রপ্তানি ও প্রবৃদ্ধির চিত্র
২০২৪-২৫ অর্থবছরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে প্রায় ৮.৮৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে যার আর্থিক মূল্যমান প্রায় ৩৯.৩৫ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সাফল্য: ২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ যা অন্য অনেক প্রতিযোগী দেশের তুলনায় বেশি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন: বরাবরের মতোই বাংলাদেশের পোশাকের প্রধান গন্তব্য ছিল ইউরোপ যেখানে মোট রপ্তানির প্রায় ৫০ শতাংশ পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে।
২ বছরের প্রধান সংকটসমূহ
সাফল্যের মাঝেও ২০২৫ সালে এই খাতকে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে শ্রম অসন্তোষ ও কারখানা বন্ধ: বছরের বিভিন্ন সময়ে বকেয়া বেতন ও মজুরিকাঠামো নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে কয়েকশ কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ অন্তত ১৩০টি কারখানায় অস্থিরতা লক্ষ্য করা গেছে। জ্বালানি ও সরবরাহ সংকট: গ্যাস ও বিদ্যুতের তীব্র সংকট এবং উচ্চ ব্যাংক সুদহার উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে যা উদ্যোক্তাদের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ ছিল। রাজনৈতিক পরিবর্তন ও ক্রেতা আস্থা: রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কিছু বিদেশি ক্রেতা সাময়িকভাবে অর্ডার কমিয়ে দিলেও বছর শেষে সেই আস্থার সংকট অনেকটাই কেটে গেছে।
৩ উদীয়মান সম্ভাবনা ও আগামীর পথ
২০২৫ সালে পোশাক শিল্পে কিছু নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে যা ২০২৬ সালে বড় ভূমিকা রাখবে বাজার বৈচিত্র্যকরণ: প্রচলিত বাজারের পাশাপাশি জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও রাশিয়ার মতো অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। জাপানে বাংলাদেশের বাজার হিস্যা বর্তমানে প্রায় ৫.৫০ শতাংশ। সবুজ বিপ্লব: বিশ্বে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পরিবেশবান্ধব বা গ্রিন ফ্যাক্টরি বাংলাদেশে অবস্থিত। পরিবেশ সচেতন পশ্চিমা ক্রেতাদের কাছে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ডিং হিসেবে দাঁড়িয়েছে। উচ্চ মূল্যের পোশাক: সাধারণ টি-শার্টের বাইরে এখন জ্যাকেট, স্যুট এবং কারিগরি পোশাক তৈরিতে বাংলাদেশ মনোযোগ দিচ্ছে যা মুনাফা বাড়াতে সহায়ক। প্রযুক্তির ব্যবহার: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অটোমেশনের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর নতুন জোয়ার শুরু হয়েছে এ বছর।
৪ বিশেষজ্ঞদের অভিমত ও বিজিএমইএ-র অবস্থান
বিজিএমইএ নেতাদের মতে ২০২৫ সাল ছিল টিকে থাকার লড়াইয়ের বছর। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতি এবং চীন থেকে ব্যবসা সরে আসার যে বৈশ্বিক প্রবণতা তার সুফল পেতে পারে বাংলাদেশ। তবে এর জন্য নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ এবং বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি।
২০২৫ সাল শেষে এটি স্পষ্ট যে শত প্রতিকূলতার মাঝেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প তার স্থিতিস্থাপকতা বজায় রেখেছে। যদি আগামী বছর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় তবে ২০২৬ সালে রপ্তানি ৫০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রার দিকে দ্রুত এগিয়ে যাবে।










