আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
কানাডার পশ্চিমাঞ্চলে ভয়াবহ দাবানলের কারণে আবারও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ও আলবার্টা প্রদেশে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় হাজার হাজার মানুষকে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাতাসের গতি ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে আগুন দ্রুত নতুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার উত্তরাঞ্চলের ফোর্ট নেলসন শহরটি সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দাবানলের কারণে পুরো শহর থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। আগুনের সূত্রপাত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, বন্ধ রয়েছে স্কুল ও সরকারি দপ্তর।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক হাজার দমকল কর্মী কাজ করছেন। আকাশপথে পানি ছিটানো এবং ভূমি থেকে আগুন রোধে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী কয়েক দিন গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করতে পারে, যা আগুন নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক বিবৃতিতে বলেন, দাবানল পরিস্থিতি গভীর উদ্বেগজনক। সরকার সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে এবং স্থানীয়দের পাশে আছে। তিনি জানান, সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং প্রয়োজনে আরও সহায়তা পাঠানো হবে।
গত বছরও কানাডায় ভয়াবহ দাবানলের ঘটনা ঘটেছিল। ২০২৩ সালে দাবানলের কারণে প্রায় দুই কোটি হেক্টর বনভূমি পুড়ে যায়, যা দেশটির ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বন আগুন হিসেবে রেকর্ড করা হয়। চলতি বছরও সেই আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে। আগুনের ধোঁয়া এখন পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে বাতাসের গুণমান খারাপ হয়ে গেছে, যা শিশু ও বয়স্কদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এমন দাবানলের প্রকোপ বাড়ছে। উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে কানাডার মতো শীতপ্রধান দেশেও এখন গ্রীষ্মে দাবানলের ঝুঁকি কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। আগে যেখানে বছরে দু-একটি বড় আগুন হতো, এখন তা রীতিমতো নিয়মিত হয়ে উঠছে।
কানাডার জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ মানুষকে ঘরবন্দী না থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সর্তক থাকতে বলা হয়েছে এবং কেউ যেন নির্দেশনা অমান্য না করেন, সে বিষয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক এই দাবানল কানাডার প্রাকৃতিক ও মানবিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ধারিত হয়নি, তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, অনেক বাড়ি ও স্থাপনা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়েছে।