Home সারাদেশ অন্যের ঘরে কাজ, ঘরে শুয়ে দুই প্রতিবন্ধী: বেঁচে থাকার সংগ্রাম

অন্যের ঘরে কাজ, ঘরে শুয়ে দুই প্রতিবন্ধী: বেঁচে থাকার সংগ্রাম


দিনাজপুরের খানসামায় মানবেতর বাস্তবতা

মো. আজিজার রহমান, খানসামা (দিনাজপুর): একই পরিবারে দুই শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী সন্তান। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া বাবা-মা দিনরাত লড়াই করে বাঁচিয়ে রেখেছেন ছেলেদের। দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহি ইউনিয়নের দুবলিয়া হটাৎপাড়া গ্রামের এ পরিবারটি আজ মানবিক সহায়তার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।

৭৬ বছরের মো. আশরাফ আলী ও তাঁর স্ত্রী ৬০ বছরের মোছা. আলেয়া বেগম। তাঁদের দুই ছেলে মো. আনোয়ার হোসেন (৩৫) ও মো. আক্কাস আলী (৩২) জন্ম থেকেই শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। দুটি দেহ আজ আর উঠে দাঁড়াতে পারে না, বিছানাই তাদের আশ্রয়।

পরিবারটির আয় বলতে সামান্য প্রতিবন্ধী ভাতা ও বৃদ্ধ মা-বাবার অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা আয় হয়। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আয়ও কমে এসেছে। দিন আসে, দিন যায়—কখনো একবেলা, কখনো আধপেটা খেয়ে চলে তাঁদের জীবনযুদ্ধ।

শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেল, অন্যের দানকৃত জমিতে একচালা কুঁড়েঘর। ঘরের কোণে দুই ছেলে নির্জীব হয়ে শুয়ে, আর মা তাঁদের খাওয়াচ্ছেন, পরিস্কার করছেন। ঘরের অন্য কোণে বৃদ্ধ আশরাফ আলী নীরবে তাকিয়ে আছেন—কোনো আশা নেই, অভিমানও না, শুধু নিস্তব্ধ আত্মসমর্পণ।

আলেয়া বেগম বলেন, “স্বামী আর দুই প্রতিবন্ধী ছেলে নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটে। অন্যের বাড়িতে কাজ করি। অনেক সময় মানুষের কাছে সাহায্য চাইতে হয়। একটু চাল, ডাল পেলে ছেলেদের মুখে ভাত দিতে পারি। কেউ যদি সহায়তা করতো, তবে বাকি জীবনটুকু একটু শান্তিতে কাটাতাম।”

চার ছেলের মধ্যে বড় ছেলে আলম আলী নিজে গরিব। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা থাকলেও সময়-সুযোগ পেলে বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়ান। তিনি বলেন, “ভাইদের চিকিৎসা ও খাবার নিয়মিত দিতে পারি না। সরকারের সহায়তা খুব দরকার।”

ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন লিটন বলেন, “পরিবারটি অত্যন্ত কষ্টে আছে। আমরা যতটুকু পারি, সহায়তা করেছি। তবে বড় পরিসরের সাহায্য দরকার, যাতে তাঁদের দীর্ঘমেয়াদি উপকার হয়।”

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তমিজুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রতিবন্ধী ভাতা চালু আছে। তবে পরিবারটির সার্বিক দিক বিবেচনায় প্রশাসনিক পর্যায়ে আরও উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

এই প্রতিবেদন পাঠকের হৃদয়ে কড়া নাড়ে। একদিকে অসহায় বাবা-মা, অন্যদিকে শুয়ে থাকা দুই সন্তান। সমাজ কি এদের পাশে দাঁড়াবে না?