বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া: কুমারখালীর জগন্নাথপুর ইউনিয়নের তারাপুর বাজারে এক রাতব্যাপী নৃশংস ঘটনা ঘটেছে, যেখানে দুই কিশোরকে দোকানে চুরির সন্দেহে নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। তাদের বয়স ১৭। গত শিক্ষাবর্ষের এসএসসি পরীক্ষায় তারা উত্তীর্ণ হয়নি।
ঘটনার সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দোকানে স্থানীয় কিশোর-তরুণেরা অবসর সময়ে ক্যারাম খেলে। রোববার সন্ধ্যায় আজাদের দাদি মারা গেলে তিনি দোকান বন্ধ করে দাদির বাড়িতে যান। রাত ১১টার দিকে ফিরে দেখেন, পেছনের দরজা খোলা এবং ড্রয়ার থেকে টাকা, সিগারেট ও কিছু মালামাল হারিয়ে গেছে। খোঁজখবর নিয়ে তিনি ওই দুই কিশোরকে সন্দেহ করেন।
রাত দুইটার দিকে আজাদ তাদের মোবাইল ফোনে ডেকে বাজারে নিয়ে আসে। সেখানে কাঠ ও বাঁশের লাঠি দিয়ে তাঁদের ওপর বর্ণনাহীন নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনের সময় এক কিশোরকে মুখে ও গলায় চেপে ধরে রাখা হয়, অন্য কিশোরকে বাঁশের লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। মারধরের ভিডিওর ৪৫ সেকেন্ড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে কিশোরদের চিৎকারে বদ্ধমূল ভীতির আভাস পাওয়া যায়।
সালিশ বসিয়ে দুই কিশোরকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এক কিশোরের মা ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করে সন্তানকে বাড়ি নিয়ে আসে। বর্তমানে তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাদের হাতে-পা, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।
ভুক্তভোগী কিশোরদের বর্ণনা অনুযায়ী, তারা চুরি করেনি। “তবুও সারারাত আমাদের ওপর লাঠি ও কাঠ দিয়ে নৃশংস মারধর চালানো হয়। ফজরের আজান পর্যন্ত নির্যাতন চলতে থাকে,” এক কিশোর জানায়। অপর কিশোরের মা বলেন, “আমাদের ছেলে চুরি করেনি, তবুও অমানবিকভাবে মারধর করা হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই।”
দোকানদার আজাদ দাবি করেন, ৫৫ হাজার টাকা ও কিছু সিগারেট চুরি হয়েছে। তিনি বলেন, “উৎসুক জনতা ওদের মারধর করেছে। পরে ওরা স্বীকারোক্তি দিয়েছে। সালিশে ৩০ হাজার টাকায় মিটমাট হয়েছে।”
জগন্নাথপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল করিম বিশ্বাস বলেন, “চোরকে গণপিটুনি দিয়ে জনগণ আমার দোকানে এনেছিল। আমি তাদের সরিয়ে দিয়েছি, কিন্তু সালিশ করিনি।”
কুমারখালী থানার ওসি খন্দকার জিয়াউর রহমান বলেন, “চুরির অভিযোগে মারধরের বিষয়টি শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই নৃশংস ঘটনার ভিডিও ও নির্যাতনের বিবরণ স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। কিশোরদের প্রতি বর্বর আচরণ ও আইন নিজের হাতে নেওয়ার বিষয়টি প্রশ্ন তুলেছে আমাদের সমাজে ন্যায়বিচারের বাস্তব চিত্র নিয়ে।










