Home First Lead নেপাল জ্বলছে জেন জেড বিক্ষোভে, সেনার হাতে শাসনভার

নেপাল জ্বলছে জেন জেড বিক্ষোভে, সেনার হাতে শাসনভার

রামেশ ভট্টরায়, কাঠমান্ডু : প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের পরও নেপালে উত্তেজনা থামছে না। বুধবার দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে নতুন করে সংঘর্ষ। বীরগঞ্জসহ অন্তত চারটি জেলায় জেল ভাঙার চেষ্টা হয়। বিভিন্ন জেল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৬০০ বন্দি পালিয়ে গিয়েছে। বাঁকের সংশোধনাগারে বন্দিরা পালাতে চাইলে পুলিশ গুলি চালায়। তাতে সাত জন আহত হন, পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাঁচ জনের মৃত্যু হয়।

উত্তাল পরিস্থিতিতে বুধবার থেকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে সেনাবাহিনী। নতুন সরকার না আসা পর্যন্ত শাসনভার সেনার হাতে থাকবে বলে জানানো হয়েছে। শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে সেনাবাহিনী। পাশাপাশি লুটপাট বা ভাঙচুর চালালে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

গত সোমবার ও মঙ্গলবার দফায় দফায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে কাঠমান্ডু থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায়। মঙ্গলবার সকাল থেকে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। সংসদ ভবন, সিংহ দরবার, মন্ত্রীদের বাসভবন ছাড়াও সুপ্রিম কোর্টে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এমনকি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বিদ্যাদেবী ভাণ্ডারির বাড়িও পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

ওলির পদত্যাগের পর মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে তাঁকে বালুওয়াটারের সরকারি বাসভবন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। একই সঙ্গে সেনাবাহিনী ঘোষণা করে—সন্ধ্যা ৫টার পর থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি থাকবে।

এদিকে, বুধবার সকালেও ঐতিহাসিক সিংহ দরবারের জানালা দিয়ে শিখা ছুটে উঠতে দেখা গেছে। অবশেষে দমকল ভেতরে ঢুকতে সক্ষম হলেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ মন্ত্রণালয় ভবনগুলোর অধিকাংশই ভস্মীভূত হয়ে গেছে। চন্দ্র শমশের রানা নির্মিত ১১৭ বছরের পুরনো ভবনটির পশ্চিম দিক, যা ভূমিকম্পে ধ্বংস হওয়ার পর গত বছর নবরূপে দাঁড় করানো হয়েছিল, এখন আবার ছাই হয়ে গেছে।

কাঠমান্ডুর দক্ষিণে সুপ্রিম কোর্ট ভবনেও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। দমকল পানি ছিটালেও শত শত মামলার নথি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অন্যদিকে, ১৯৯৩ সালে চীনের সহায়তায় নির্মিত বিরেন্দ্র ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার (বিআইসিসি)—যেখানে বর্তমানে সংসদ বসছে—৮ সেপ্টেম্বর প্রথম আক্রমণের শিকার হয়। প্রবেশদ্বার ভাঙার চেষ্টা করলে গুলিতে নিহত হন ২০ জন শিক্ষার্থী।

মঙ্গলবার ও বুধবারের সহিংসতায় আরও আট জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকজন পুলিশকর্মী আছেন, যাঁদের টিঙ্কুনে ও বুদনিলকণ্ঠায় লিঞ্চ করে হত্যা করা হয়।

বর্তমানে পুরো কাঠমান্ডু সেনা নিয়ন্ত্রণে। রাস্তায় টহল বাড়ানো হয়েছে। দেশজুড়ে কারফিউ বলবৎ রয়েছে, আর সাধারণ মানুষ আতঙ্কে ঘরবন্দি।