ধারাবাহিক প্রতিবেদন: পবিত্র আহ্বানের পথে পর্ব-৭
মওলানা মোহাম্মদ কাউসার: হজের যাত্রা শেষ হলেও তার শিক্ষা ও প্রভাব আজীবন অব্যাহত থাকে। পবিত্র মক্কা থেকে ফিরে এসে একজন হাজীর জীবনে শুরু হয় নতুন অধ্যায়, যেখানে আত্মার পরিশুদ্ধি এবং আল্লাহর পথে চলার অঙ্গীকার বাস্তব জীবনে প্রকাশ পায়।
আত্মার নতুন সূচনা:
হজ সম্পন্ন করা মানে কেবল শরীর ও ইহরামের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা নয়। এটি এক গভীর আত্মিক রূপান্তর। হজে হাজীরা নানান ধরনের পরিশ্রম, ধৈর্য ও ত্যাগ করেন, যা তাদের অন্তরকে পরিশোধিত করে।
মক্কা থেকে দেশে ফিরে হাজীরা বুঝতে পারেন জীবনের উদ্দেশ্য শুধু দুনিয়াবাসী সুখসুখ নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। তারা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর আদেশ মেনে চলতে অঙ্গীকারবদ্ধ হন।
কুরবানির শিক্ষা ও মানবিকতা:
হজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ কুরবানি, যা আত্মত্যাগের অনন্য নিদর্শন। দেশে ফিরে হাজীরা এই কুরবানির শিক্ষা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টা করেন।
অর্থাৎ, নিজেদের মধ্যে অহংকার, দম্ভ, লোভ ত্যাগ করে পরোপকার ও মানবতার সেবায় নিয়োজিত হন। দুঃস্থ, অসহায় ও দুর্বল মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসা তাদের নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়।
সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্কের উন্নয়ন:
হজ থেকে ফিরে অনেক হাজীর পারিবারিক ও সামাজিক জীবনেও পরিবর্তন আসে। তারা পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা বোধ করে, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের প্রতি করুণাময় মনোভাব নিয়ে সামনে এগিয়ে যান।
হজের শিক্ষা যেমন মানবতার প্রতি দায়বদ্ধতা শেখায়, তেমনি সহনশীলতা, ক্ষমাশীলতা ও একে অপরের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি করে। এতে সমাজে শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় থাকে।
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন:
হজ শেষে হাজীর জীবনযাত্রায় যেমন ধর্মভীরুতা বৃদ্ধি পায়, তেমনি তারা নিষ্ঠার সঙ্গে নামাজ আদায়, রোজা পালন, কোরআনের অধ্যয়ন ও অন্যান্য ইবাদত নিয়মিত পালন করেন।
এদের মধ্যে অনেকেই জীবনযুদ্ধে আল্লাহর পথে নিজের নিয়তি পরিবর্তনের চেষ্টা করেন। তারা সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে এবং অন্যদের জন্য আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেন।
হজের যাত্রা যখন শেষ হয়, তখন শুরু হয় জীবনের নতুন অধ্যায়। এটি কেবল ধর্মীয় কাজ নয়, বরং এক গভীর আত্মিক ও সামাজিক রূপান্তর। হাজীরা নিজেকে নবায়িত করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করেন এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের আদর্শে জীবন গড়ার অঙ্গীকার করে।
পরবর্তী পর্ব: হজের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা—আধুনিক ব্যবস্থা ও সচেতনতা