পাল্টা ব্যবস্থা: বাতিল সিন্ধু পানিচুক্তি ও পাকিস্তানিদের ভিসা,
বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: বুধবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর কূটনৈতিক ও কৌশলগত পালটা ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ঘোষণা করেছে ভারত। বাতিল করা হয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জলচুক্তি । আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। পাকিস্তানিদের জন্য সমস্ত ‘সার্ক’ ভিসা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। ওই ভিসার মাধ্যমে যে পাকিস্তানিরা বর্তমানে ভারতে রয়েছেন, তাঁদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পহেলগাঁও হামলার সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। তবে ভারত তা মেনে নেয়নি। বরং, একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে নয়াদিল্লি। এতে করে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে বৈঠকে বসে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটি। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে বৈঠক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ছিলেন এই বৈঠকে। সেই বৈঠকের শেষে জানানো হয়, পহেলগাঁওয়ের হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত।
জানানো হয়, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়া বন্ধ না করা পর্যন্ত বাতিল করা হল সিন্ধু জলচুক্তি। অবিলম্বে বন্ধ করা হবে আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত। ওই সীমান্ত দিয়ে যারা ভারতে প্রবেশ করেছেন তাঁদের আগামী ১ মে-এর মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে। আগামী দিনে পাকিস্তানিদের ‘সার্ক’ ভিসাও বাতিল হয়েছে। আগে যে ভিসাগুলি দেওয়া হয়েছিল, সেগুলিও বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। ফলে ওই ভিসার মাধ্যমে ভারতে থাকা পাক নাগরিকদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে।
এছাড়াও নয়াদিল্লিতে অবস্থিত পাকিস্তান হাইকমিশনে নিযুক্ত সমস্ত সামরিক উপদেষ্টাদের সরিয়ে নেওয়া হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভারতে থাকা হাইকমিশনে কর্মকর্তা সংখ্যাও আগামী ১ মে হতে ৫৫ থেকে ৩০-এ নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ইসলামবাদেও ভারতীয় হাইকমিশন থেকে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। সেই সঙ্গে পহেলগাঁও হামলার আবহে দেশের প্রতিটি বাহিনীতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। চূড়ান্ত সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সকলকে। সেই সঙ্গে পহেলগাঁওয়ে বিরুদ্ধে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে বলেও ঘোষণা দেয়া হযেছে।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। গত কয়েক মাস যাবত এ অঞ্চল নিয়ে দু’দেশের মধ্যে টানাপোড়েনে কিছুটা ‘শীতল’ থাকলেও ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদের কূটনীতি। তবে পেহেলগামের এই ঘটনার পর কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত। আশঙ্কা করা হচ্ছে পাল্টা জবাব হিসেবে পাকিস্তানে হামলা চালাতে পারে মোদী সরকার। ঘটনার একদিন পরই পাঁচটি বড় কূটনৈতিক অ্যাকশন নিলো দেশটি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নৃশংস হামলার জবাবে ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো না কোনো ধরনের পাল্টা ব্যবস্থা থাকতে পারে। নয়াদিল্লিভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক ‘সেন্টার ফর ল্যান্ড ওয়ারফেয়ার স্টাডিজ’-এর (ক্লস) পরিচালক তারা কার্থা বলেন, ‘এটি একপ্রকার যুদ্ধ ঘোষণা। আমরা একে সেভাবেই দেখছি। এটা এমন এক সময় ঘটল, যখন কিছুদিন আগেই পাকিস্তানের সেনাপ্রধান একটি বিতর্কিত ভাষণ দিয়েছিলেন।’
গত ১৬ এপ্রিল পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির এক বক্তব্যে ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগের অনুঘটক দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন। এবং মুসলমানদের ‘হিন্দুদের থেকে আলাদা পরিচয়’–এর কথা জোর দিয়ে বলেন তিনি।