Home Second Lead ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মাঝে সব আমদানি নিষিদ্ধ করল দিল্লি

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মাঝে সব আমদানি নিষিদ্ধ করল দিল্লি

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: ভারত সরকার পাকিস্তান থেকে সব ধরনের পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ২ মে জারি করা এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

বিদেশ বাণিজ্য নীতির (২০২৩) সংশোধনীতে “২.২০এ” নামের নতুন একটি ধারা যুক্ত করে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “পাকিস্তান থেকে উৎসারিত বা রপ্তানিকৃত, এমন সব পণ্য — তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমদানিযোগ্য হোক বা না হোক — ভারতের ভূখণ্ডে প্রবেশ করা নিষিদ্ধ থাকবে।”

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “এই নিষেধাজ্ঞা জাতীয় নিরাপত্তা ও জনস্বার্থ রক্ষার্থে আরোপ করা হয়েছে।”

সাম্প্রতিক কাশ্মীরের পাহেলগাম পর্যটন কেন্দ্রে এক সন্ত্রাসী হামলার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। ২২ এপ্রিল বেইসরান মেদিনায় ওই হামলায় অন্তত ২৬ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন, যাদের মধ্যে একজন নেপালি পর্যটক এবং একজন স্থানীয় ঘোড়ার গাইডও ছিলেন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে বলেছে, “হামলার পেছনে সীমান্ত-পার পারস্পরিক যোগাযোগ রয়েছে।” পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করে নিরপেক্ষ তদন্তের প্রস্তাব দেয়।

এই ঘটনার পর ভারতের পক্ষ থেকে একাধিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল, কূটনৈতিক কর্মীদের প্রত্যাহার এবং ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত ইন্দাস পানি চুক্তি স্থগিত করে ভারত। এই চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান সিন্ধু নদীর পানি ব্যবহার করতে পারত, যা বর্তমানে ঝুঁকির মুখে।

পাকিস্তান ইতোমধ্যে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বন্ধ রেখেছে। এখন ভারতের এই নিষেধাজ্ঞার ফলে উভয় দেশের মধ্যে সীমান্ত বাণিজ্য কার্যত সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেল। এর আগে পুলওয়ামা হামলার (২০১৯) পর ভারত পাকিস্তানি পণ্যের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল, যার ফলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পাকিস্তানি আমদানির পরিমাণ মোট ভারতের আমদানির ০.০০০১ শতাংশের নিচে নেমে আসে।

পাকিস্তান থেকে মূলত ওষুধ, ফল ও তেলবীজ জাতীয় পণ্য আমদানি হতো। তবে গত কয়েক বছরে এই বাণিজ্য ধীরে ধীরে প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে আসে। পাহেলগাম হামলার পর ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত পথও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন যে, “কাশ্মীর থেকে সন্ত্রাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো ধরনের বাণিজ্য আলোচনা হবে না।”

বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ রেখা ও আন্তর্জাতিক সীমান্তেও উত্তেজনা বিরাজ করছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী নিয়মিতভাবে ভারতীয় পোস্ট লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করছে, এবং ভারতীয় বাহিনীও এর জবাব দিচ্ছে।

বিশ্ব নেতারা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, দুই প্রতিবেশী পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানাচ্ছেন। তবুও ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান এখন অনেকটা কঠোর এবং জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।