Home চেম্বার বিতর্কে পাবনা চেম্বারের কমিটি: অভিযোগে আওয়ামী প্রভাব, ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা

বিতর্কে পাবনা চেম্বারের কমিটি: অভিযোগে আওয়ামী প্রভাব, ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, পাবনা: পাবনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নবগঠিত কার্যনির্বাহী কমিটি নিয়ে জেলার ব্যবসায়ী মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, নিষিদ্ধ সিরাপ ও ক্লিনিক মালিক এবং দলীয় প্রভাবশালীদের স্থান দেওয়াকে কেন্দ্র করে সমালোচনার ঝড় উঠেছে সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলে।
অভিযোগ উঠেছে—বিএনপি ও জামায়াত ঘরানার দু’একজনকে গোপনে যুক্ত করে পুরো কমিটি গঠনের কাজ অত্যন্ত সুকৌশলে সম্পন্ন করা হয়েছে, যাতে দলীয় প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করেই একচ্ছত্র প্রভাব কায়েম করা যায়।

গোপনে কমিটি, খোলসা হতেই ক্ষোভ

গত বুধবার চেম্বার কার্যালয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় নবগঠিত কমিটির তালিকা টাঙানো হলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। তারপর থেকেই জেলার সাধারণ ব্যবসায়ীরা বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। অনেকে বলছেন—কমিটি গঠনের পদ্ধতি ছিল অস্বচ্ছ এবং এতে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী বা নির্বাচনের সুযোগ ছিল না।

কমিটির সভাপতি করা হয়েছে আগের সহসভাপতি ফোরকান রেজা বিশ্বাস বাদশাকে। তিনি ‘শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদ’-এর পাবনা জেলা সভাপতি ছিলেন। সামাজিক মাধ্যমে তার আওয়ামী লীগপন্থি অবস্থান স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান—নৌকার পক্ষে পোস্টার, মিছিল, আওয়ামী নেতাদের সঙ্গে ছবিতে অংশগ্রহণ প্রমাণ হিসেবে ঘুরে বেড়াচ্ছে ফেসবুকে।

দলীয় ঘনিষ্ঠদের প্রাধান্য

কমিটিতে রয়েছেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার আত্মীয় হারুনুর রশিদ লাইজু, ব্যবসায়ী শামীম হোসেন, কুতুব উদ্দিন সুইট, ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক ইমরুল হাসান রন্টি, এবং আরও বেশ কয়েকজন ক্লিনিক ও ওষুধ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিত্ব। অভিযোগ রয়েছে—তাদের অনেকেই আগে চেম্বারের সদস্য ছিলেন, এবং তারা সবাই দলীয় ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

বিরোধীদের অভিযোগ: ভোট ছাড়াই জবরদস্তি কমিটি

বিএনপি-জামায়াতপন্থি ও নির্দলীয় অনেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন—এই কমিটি গঠনের পেছনে জনমতের কোনো প্রতিফলন নেই। বরং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক বলয়ের ছত্রচ্ছায়ায় এটি একতরফাভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পাবনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক বরকতউল্লাহ ফাহাদ বলেন, “এই কমিটি অনৈতিক, অগণতান্ত্রিক এবং একদলীয় ফ্যাসিবাদী চেতনারই প্রতিফলন। পাবনার ছাত্রসমাজ এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছে।”

ব্যবসায়ী পরিচালক মাসুদুর রহমান মিন্টু জানান, “কমিটি নিয়ে হাইকোর্টে রিট রয়েছে। তার রায় ছাড়াই নতুন কমিটি হলে সেটি অবৈধ। এখানে কোনো ভোট হয়নি, কোনো নির্বাচন হয়নি। এটা একটি একচেটিয়া সিদ্ধান্ত।”

নবগঠিত সভাপতির বক্তব্য: সমালোচনা হবেই

কমিটির সভাপতি ফোরকান রেজা বিশ্বাস বাদশা বলেন, “সমালোচনা তো থাকবেই। আমি শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদের সভাপতি হয়েছি, কিন্তু কাজ করিনি। ৫ আগস্টের পর আমরা নতুনভাবে শুরু করেছি।”

পূর্বের অভিজ্ঞতা স্মরণ

এর আগে পাবনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি গঠন নিয়ে একই ধরনের বিতর্ক দেখা গিয়েছিল। সেখানেও আওয়ামী ঘরানার লোকজন নিয়ে কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছিল। এমনকি ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে যাকে যুক্ত করা হয়েছিল, তাকে জেলার কেউ চিনত না। পরবর্তীতে সেই কমিটি বাতিল করতে বাধ্য হয় প্রশাসন।

ব্যবসায়ীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে অসন্তোষ

পাবনার সাধারণ ব্যবসায়ী, সামাজিক সংগঠন এবং রাজনৈতিক সচেতন মহলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে—চেম্বারের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে দলীয়করনের এ ধারা চলতে থাকলে স্বার্থবিরোধী ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত, অনৈতিক প্রভাব ও দুর্নীতির ঝুঁকি বাড়বে।

এই প্রতিবাদে বড় পরিসরের আন্দোলনেরও আভাস মিলছে। ব্যবসায়ীদের একটি অংশ ইতিমধ্যে বিক্ষোভ ও সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।