মহুয়া রাহমান:
প্রতিবেশী দেশ হলেও ভুটান সম্পর্কে আমাদের জানাশোনা অল্প। হিমালয়ের কোলে গড়ে ওঠা এই ছোট্ট রাজতান্ত্রিক দেশটি নিজেদের “সুখী জাতি” হিসেবে পরিচয় দেয়। এই সুখের দেশের নারীরা কেমন আছেন? কীভাবে পড়াশোনা করেন? জীবনের কোন পথে হাঁটছেন? বিয়ে ও কর্মসংস্থানে তাঁদের অবস্থান কেমন? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে এই ফিচার প্রতিবেদনে।
শিক্ষায় এগিয়ে
ভুটানে মেয়েরা শিক্ষাক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। দেশটির প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ছেলেমেয়েদের শিক্ষার হার প্রায় সমান। ইউনিসেফের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ভুটানের মেয়েদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হার প্রায় ৯৭ শতাংশ। অনেক পরিবারে মেয়েরাই এখন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়াশোনা করছে। থিম্পু, পারো ও ফুন্টশোলিং শহরে রয়েছে আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেখানে মেয়েদের উপস্থিতি ক্রমবর্ধমান।
তবে দুর্গম পাহাড়ি গ্রামে এখনো কিছু বাধা রয়ে গেছে। বিশেষ করে দূরত্ব ও পরিবহন সংকটের কারণে অনেক মেয়ে মাধ্যমিকের পর আর স্কুলে যেতে পারে না। ভুটান সরকার এসব জায়গায় মেয়েদের স্কুলে রাখতে হোস্টেল সুবিধা, স্কলারশিপ ও শিক্ষা সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালু করেছে।
বিয়ের ধরন ও সামাজিক রীতিনীতি
ভুটানে বিয়ে নিয়ে একধরনের সহজ ও নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। এখানে অনেক সময়ই মেয়ে পক্ষের বাড়িতে ছেলে এসে বসবাস করে, যা “ম্যাট্রিলোকাল” বিয়ের একটি দৃষ্টান্ত। বিয়ের আগে প্রেম বা সহবাস সমাজে অনেকটাই স্বাভাবিকভাবে গ্রহণযোগ্য। মেয়েদের মতামত ছাড়া বিয়ের ঘটনা খুবই বিরল। বিবাহ বিচ্ছেদকেও সামাজিকভাবে ঘৃণিত চোখে দেখা হয় না, বরং ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
তবে সাম্প্রতিককালে শহরাঞ্চলে বিয়ের বয়স বেড়েছে। ক্যারিয়ার ও পড়াশোনাকে প্রাধান্য দেওয়ার কারণে অনেক নারী ত্রিশের পর বিয়ে করছেন।
কর্মসংস্থানে নারীর পদচারণা
ভুটানের নারীরা সরকারি চাকরি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যাংক ও ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছেন। দেশটির নাগরিক সমাজে নারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে বেশি। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, প্রশাসনিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে কর্মরত কর্মীদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি নারী। তথ্য প্রযুক্তি ও উদ্যোক্তা ক্ষেত্রেও নারীরা আগ্রহী হচ্ছেন।
তবে শ্রমনির্ভর ক্ষেত্র, যেমন নির্মাণশিল্প ও কৃষিকাজে নারীদের উপস্থিতি অপেক্ষাকৃত কম। আবার গৃহস্থালি শ্রমের চাপ আজও মূলত নারীদের কাঁধেই বেশি। পরিবারে ভূমিকা ও কর্মক্ষেত্রের চাহিদার ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে তারা দ্বিধায় পড়েন।
জীবনযাত্রা ও স্বাধিকার
ভুটানে নারীদের জীবনযাত্রা তুলনামূলকভাবে স্বাধীন ও সম্মানজনক। অধিকাংশ পরিবারেই মেয়েদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। সম্পত্তির মালিকানায় মেয়েরা পিছিয়ে নেই। অনেক জাতিগোষ্ঠীতে জমি ও ঘরবাড়ি মেয়েদের নামে লিখে দেওয়া হয়, বিশেষ করে জংখা ও শারচপ পরিবারগুলোতে।
তবে পার্বত্য অঞ্চলে, বিশেষ করে খাম বা লায়া উপজাতিদের মধ্যে এখনো কিছু পারিবারিক বিধিনিষেধ রয়েছে, যেগুলো ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে।
ছোট দেশে বড় সম্ভাবনা
একটি শান্ত, সবুজ ও সংস্কৃতিময় দেশে নারীদের সামনে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক স্বাধীনতায় ভুটানের মেয়েরা ধীরে ধীরে নিজেদের জায়গা করে নিচ্ছেন। প্রতিবেশী হিসেবে আমাদের পক্ষে এই সমাজ থেকে শেখার অনেক কিছু আছে।
আপনিও কি এমন একটি সমাজের স্বপ্ন দেখেন, যেখানে নারীরা স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠতে পারেন? ভুটানের এই গল্প যদি আপনার মন ছুঁয়ে যায়, তাহলে প্রতিবেদনটি বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। ফেসবুকে একটি লাইক দিয়ে আমাদের উৎসাহ দিন—আপনার এক ক্লিক আমাদের পথচলায় বড় অনুপ্রেরণা।
🟢 আপনার মতামত কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না!










