Home Second Lead তারল্য সংকট আর বৈশ্বিক চাপ, পুঁজিবাজারে পতনের ধারা

তারল্য সংকট আর বৈশ্বিক চাপ, পুঁজিবাজারে পতনের ধারা

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: দেশের দুই প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গত সপ্তাহ কেটেছে দরপতনের মধ্য দিয়ে। সূচক, লেনদেন ও বাজার মূলধনের টানা পতন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে হতাশা তৈরি করেছে। সপ্তাহজুড়ে উভয় বাজার থেকে হারিয়ে গেছে প্রায় ৬ হাজার ৯৯ কোটি টাকার মূলধন।

ডিএসইর পরিসংখ্যান বলছে, প্রধান সূচক ডিএসইএক্স দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪১৫ পয়েন্টে, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে প্রায় ৩৫ পয়েন্ট কম। শরিয়াহ সূচকও নেমেছে ১ হাজার ১৭১ পয়েন্টে। শুধু এসএমই সূচকে সামান্য উত্থান দেখা গেলেও সামগ্রিকভাবে ডিএসইর চিত্র ছিল নেতিবাচক। এ সময়ে লেনদেনের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৯১৮ কোটি টাকায়।

অপরদিকে সিএসইতে লেনদেনও কমেছে, সূচক নেমেছে ২৪৯ পয়েন্টে। বাজার মূলধন থেকে এক সপ্তাহে উধাও হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দরপতন হয়েছে অর্ধেকেরও বেশি শেয়ারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে এই পতন একদিনের ঘটনা নয়। বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতা, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার চাপ, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি মিলিয়ে একটি অনিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি করেছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা আস্থাহীনতায় ভুগছেন।

বাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এক আলোচনায় জানান, “পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের অংশগ্রহণ আশানুরূপ বাড়ছে না। সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা স্বচ্ছতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিলেও তা বিনিয়োগকারীর মনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি। তারল্য সংকটের কারণে অনেক বিনিয়োগকারী স্বল্পমেয়াদী কেনাবেচায় ঝুঁকছেন, যা বাজারকে অস্থির করছে।”

আন্তর্জাতিক বাজারেও একই ধরনের চিত্র দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন বাজারে সুদের হার বৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব পড়ছে। বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ বাজার থেকে সরে গিয়ে তুলনামূলক নিরাপদ খাতে বিনিয়োগ করছেন। বাংলাদেশের বাজারও এই প্রভাব থেকে মুক্ত নয়।

একজন খুচরা বিনিয়োগকারী বলেন, “প্রতিদিনই শেয়ার কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। বাজারে কোনো ইতিবাচক সংবাদ আসছে না। আমরা আর কতদিন অপেক্ষা করব জানি না।” অন্য একজন বিনিয়োগকারী জানান, তিনি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ থেকে সরে এসে স্বল্প সময়ের লেনদেনে চলে এসেছেন, কিন্তু তাতেও লাভ নেই।

বিদায়ী সপ্তাহের এই পরিস্থিতি আবারও ইঙ্গিত দিয়েছে, শুধুমাত্র লেনদেন বাড়ানো বা সাময়িক প্রণোদনা দিয়ে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। স্বচ্ছতা, নীতি সহায়তা ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানো ছাড়া আস্থা ফেরানো যাবে না। নীতিনির্ধারকদের কার্যকর উদ্যোগ ছাড়া বিনিয়োগকারীর হতাশা আরও গভীর হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।