বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: আজ ৭ সেপ্টেম্বর রাতে বিশ্বজুড়ে ঘটতে যাচ্ছে বছরের শেষ পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। বাংলাদেশের আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে এখান থেকেও দেখা যাবে বিরল এই জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক দৃশ্য। মহাজাগতিক এই ঘটনাকে ঘিরে যেমন আছে বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব, তেমনি আছে মানুষের কৌতূহল, বিশ্বাস ও নানা সংস্কার।
মহাজাগতিক দৃষ্টিকোণ
পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ ঘটে তখনই, যখন সূর্য, পৃথিবী ও চন্দ্র একই সরলরেখায় এসে যায় এবং পৃথিবীর ছায়া চাঁদকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের কারণে সরাসরি সূর্যালোক চাঁদে না পড়লেও বায়ুমণ্ডল দিয়ে বাঁক নিয়ে যাওয়া লালচে আলো চাঁদে প্রতিফলিত হয়। ফলে চাঁদ ‘রক্তচন্দ্র’ রূপে দেখা যায়। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেন, এই দৃশ্য মহাবিশ্বের গাণিতিক নিখুঁততার এক চমকপ্রদ প্রমাণ।
বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য
চন্দ্রগ্রহণ শুধু দৃশ্যমান সৌন্দর্যের বিষয় নয়, বরং গবেষণার ক্ষেত্রেও এর গুরুত্ব রয়েছে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের অবস্থা ও গঠনের কিছু সূক্ষ্ম তথ্যও গ্রহণের সময় বিশ্লেষণ করা যায়। যেমন, চাঁদে প্রতিফলিত আলোর রঙ ও তীব্রতা থেকে বায়ুমণ্ডলের ধূলিকণা বা দূষণের ঘনত্বের ধারণা পাওয়া সম্ভব। তাই গ্রহণ মহাকাশবিজ্ঞানীদের জন্য একটি পরীক্ষাগারও বটে।
সাংস্কৃতিক বিশ্বাস ও লোকাচার
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার সমাজে চন্দ্রগ্রহণকে ঘিরে নানা বিশ্বাস প্রচলিত। কোথাও এটিকে অশুভ মনে করা হয়, কোথাও আবার বিশেষ উপাসনা বা প্রার্থনা করা হয়। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের জন্য বিভিন্ন সতর্কতা উচ্চারণ করা হয়—ছুরি ব্যবহার না করা, বাইরে না যাওয়া ইত্যাদি। যদিও বৈজ্ঞানিকভাবে এসবের কোনো ভিত্তি নেই, তবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এগুলো লোকবিশ্বাস হিসেবে টিকে আছে।
সাধারণ মানুষের কৌতূহল
চন্দ্রগ্রহণ সব সময় সাধারণ মানুষের কাছে এক অন্যরকম উত্তেজনার বিষয়। আকাশে হঠাৎ করে চাঁদকে লাল বা কালচে হয়ে যেতে দেখা শিশু থেকে বয়স্ক সবাইকে মুগ্ধ করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি ছবি শেয়ার করা, বন্ধুদের সঙ্গে টেলিস্কোপে দেখা কিংবা ছাদে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকার মতো অভিজ্ঞতা অনেকের জীবনেই স্মরণীয় হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গ
আইএসপিআর জানিয়েছে, বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ২৮ মিনিটে গ্রহণ শুরু হবে এবং ভোর পর্যন্ত চলবে। টানা ৭ ঘণ্টা ২৭ মিনিটের এই মহাজাগতিক ঘটনা যদি মেঘমুক্ত আকাশে দেখা যায়, তবে দেশের মানুষ বছরের শেষ চন্দ্রগ্রহণের সাক্ষী হবেন। বিশেষ করে শহরের বাইরে, আলোকদূষণ কম এলাকাগুলোতে এটি স্পষ্ট দেখা যাবে।
পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ কেবল জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্য গবেষণার সুযোগ নয়, বরং সাধারণ মানুষের জন্য বিস্ময় ও সৌন্দর্যের অভিজ্ঞতা। বিজ্ঞান, বিশ্বাস আর বিস্ময়—তিনটি স্তরের এই মেলবন্ধনই গ্রহণকে প্রতিবার অনন্য করে তোলে। আর আজকের গ্রহণ বাংলাদেশের মানুষের জন্যও হবে এক অবিস্মরণীয় মহাজাগতিক উৎসব।










