Home আন্তর্জাতিক সৌদি আরবে মায়ের হাতে তিন সন্তান খুন, শোকস্তব্ধ হায়দরাবাদ

সৌদি আরবে মায়ের হাতে তিন সন্তান খুন, শোকস্তব্ধ হায়দরাবাদ

তিন সন্তান

সৌদি আরবের আল খোবারে হায়দরাবাদের এক মা তিন সন্তানকে হত্যার ঘটনায় স্তম্ভিত ভারতের হায়দরাবাদ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবাসী জীবনের একাকিত্ব, মানসিক চাপ ও পারিবারিক সংকটের প্রতিফলন ঘটেছে এই ট্র্যাজেডিতে।

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: সৌদি আরবের আল খোবার শহরে তিন নিষ্পাপ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় স্তম্ভিত হায়দরাবাদ। হায়দরাবাদের মোহাম্মদী লাইনস এলাকার বাসিন্দা সৈয়দা হুমেরা আমরিন অভিযোগের মুখে রয়েছেন, যিনি নিজের সন্তান সাত বছরের যুগল ভাই সাদেক আহমেদ, আদেল আহমেদ এবং তিন বছরের ইউসুফ আহমেদকে বাথটবে ডুবিয়ে হত্যা করেছেন। সন্তানদের খুনের পর তিনি নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলে জানা গেছে। বর্তমানে সৌদি পুলিশ তাঁকে আটক করেছে।

ঘটনার পেছনে কী কারণ কাজ করেছে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, আমরিন দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। প্রবাস জীবনে একাকিত্ব, ঘরোয়া অশান্তি এবং নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার চাপ তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দিয়েছিল।

প্রবাস জীবনের চাপ ও মানসিক স্বাস্থ্য

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রবাসী জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে নীরব সংগ্রাম। ভিনদেশে থেকে পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া অনেককে মানসিক চাপে ফেলে। বিশেষ করে নারীরা, যাদের সামাজিক পরিসর সীমিত হয়ে যায়, তারা একাকিত্বে ভুগতে শুরু করেন। ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা, সংস্কৃতির ভিন্নতা ও পরিচিত পরিবেশের অভাব তাদের মানসিকভাবে ভেঙে দিতে পারে।

মনোবিশেষজ্ঞদের মতে, প্রবাসী পরিবারগুলোতে প্রায়ই দাম্পত্য অশান্তি, আর্থিক চাপ এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা একসঙ্গে কাজ করে। এসবের মিলিত প্রভাব মানসিক অবসাদকে গভীর করে তোলে, যা অনেক সময় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। শিশু হত্যা বা আত্মহত্যার মতো ঘটনা তারই ভয়ংকর রূপ।

সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ঘাটতি

ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ কাজের সন্ধানে বা পরিবারসহ প্রবাসে যান। কিন্তু তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া হয় না বললেই চলে। কাজের চাপ ও আর্থিক প্রত্যাশার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় না। প্রবাসী সমাজে কাউন্সেলিং বা মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।

আল খোবারের ঘটনাটি তাই শুধু একটি পরিবারের ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, বরং বৃহত্তর সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ঘাটতির প্রতিফলন।

হায়দরাবাদে শোকের ছায়া

এদিকে হায়দরাবাদের মোহাম্মদী লাইনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। প্রতিবেশীরা বলছেন, ‘‘প্রতিদিন তিন শিশুর হাসি-আনন্দে ভরে থাকত ওই পরিবার। আজ তাদের নিথর দেহের খবর শুনে আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি।’’

সামনে যে প্রশ্ন

এই মর্মান্তিক ঘটনায় সামনে এসেছে বড় প্রশ্ন—প্রবাসী জীবনের চাপ, একাকিত্ব ও পারিবারিক অশান্তি মোকাবিলায় সমাজ ও রাষ্ট্র কতটা প্রস্তুত? প্রবাসীদের জন্য কি নিয়মিত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, কাউন্সেলিং এবং সহায়তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায় না?

আল খোবারের তিন শিশুর মৃত্যু তাই শুধু একটি অপরাধ নয়, বরং প্রবাসী জীবনের কঠিন বাস্তবতা নিয়ে নতুন করে ভাবার আহ্বান।