বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি,ঢাকা: ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের ঝাউচর আমলা টাওয়ার রোডে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে শনিবার (১৫ জুন) রাতে। রাত পৌনে ১১টার দিকে নিজ বাসার নিচতলার একটি কক্ষে বাবার ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারায় ১৬ বছরের কিশোর রাহাবুল ইসলাম রাসেল।
রাসেল একটি স্থানীয় হোটেলে কাজ করত। তার গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায়। তিন ভাইয়ের মধ্যে মেজ সন্তান ছিল সে। বড় ভাই একজন পশু চিকিৎসক এবং ছোট ভাই মাদ্রাসার ছাত্র দুজনেই থাকেন গ্রামের বাড়িতে।
রাসেল থাকত ঢাকায় তার বাবা জুয়েল রানার সঙ্গে। মা শাহনাজ বেগম মধ্যপ্রাচ্যের দেশ জর্ডানে কর্মরত। বাবা-ছেলের আশ্রয় ছিল ঝাউচর আমলা টাওয়ার রোডের একটি ভাড়া বাসায়।
ঘটনার রাতে হঠাৎ ফোন আসে রাসেলের মামা হুমায়ুন কবিরের কাছে। ফোনের ওপারে ছিলেন স্বয়ং জুয়েল রানা। তিনি কাঁপা কণ্ঠে জানান, তিনি তার ছেলেকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছেন এবং ছেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
হুমায়ুন কবির বলেন, “স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় রাসেলকে উদ্ধার করে প্রথমে কাছাকাছি একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু রাত সাড়ে ১১টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”
হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ মো. ফারুক জানান, নিহত রাসেলের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেকের মর্গে রাখা হয়েছে। আইনানুগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং থানায় জানানো হয়েছে।
ঘটনার পেছনে রয়েছে গভীর পারিবারিক দ্বন্দ্ব। রাসেলের মামা জানান, ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল তার মা শাহনাজের। কিন্তু জুয়েল রানা নিজের জন্য বিদেশে যাওয়ার দাবি করছিলেন। বিষয়টি নিয়ে পরিবারে দীর্ঘদিন ধরে কলহ চলছিল।
হুমায়ুন বলেন, “জুয়েল রানা প্রায়ই হুমকি দিত, তাকে বিদেশে না পাঠালে পরিবারের শান্তি নষ্ট করবেন এবং অন্য বিয়ে করে চলে যাবেন। এই মানসিক চাপে মা শাহনাজ ছেলের ভবিষ্যৎ ভাবতে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেন, প্রথমে রাসেলকে পাঠাবেন। এটাই কাল হয়ে দাঁড়ায়।”
একজন অল্পবয়সি হোটেলকর্মী কিশোর, যে জীবনের অনিশ্চিত প্রান্তে দাঁড়িয়ে স্বপ্ন দেখছিল বিদেশে যাওয়ার, শেষ পর্যন্ত তার স্বপ্ন রক্তাক্ত এক রাতে স্তব্ধ হয়ে গেল।
একটি পরিবার ভেঙে পড়েছে, মা বিদেশে, বাবা কারাগারের পথে, আর সন্তান চিরতরে চলে গেছে। এ যেন এক নীরব বিস্ফোরণ, যার ধাক্কা কেবল পরিবারের নয়, সমাজের বিবেকেও নাড়া দিয়ে গেল।