Home আন্তর্জাতিক ট্রাম্পের ঘোষণায় এশিয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল শেয়ারের পতন

ট্রাম্পের ঘোষণায় এশিয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল শেয়ারের পতন

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ১ অক্টোবর থেকে ব্র্যান্ডেড ওষুধ আমদানিতে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির শেয়ার দামে ধস নেমেছে। তবে যেসব কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে ইতোমধ্যেই নিজস্ব উৎপাদন কারখানা নির্মাণ শুরু করেছে, তাদের ক্ষেত্রে এই শুল্ক কার্যকর হবে না।

বাজার বিশ্লেষকরা আগে থেকেই ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যে শুল্ক আরোপের সম্ভাবনার কথা অনুমান করেছিলেন। তবুও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বড় ধরনের ব্যবসায়িক উপস্থিতি থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাপ পড়ে। জাপানের সুমিতোমো ফার্মার শেয়ার ৪.৩ শতাংশ এবং অস্ট্রেলিয়ার সিএসএল (CSL) ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়।

মর্নিংস্টারের এশিয়া অঞ্চলের ইকুইটি রিসার্চ পরিচালক লরেন ট্যান বলেন, আলোচনার ধারা বিবেচনায় চূড়ান্ত শুল্কহার সম্ভবত কম হতে পারে, তবে অনিশ্চয়তার কারণে শেয়ারমূল্যে চাপ বাড়ছে।

অন্যদিকে বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, এশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোর ওপর প্রভাব সীমিত হবে, কারণ তারা প্রধানত জেনেরিক ওষুধ উৎপাদন করে।

সিটি ওয়েলথের এশিয়া বিনিয়োগ কৌশল প্রধান কেন পেং বলেন, “এটি শুধু ব্র্যান্ডেড ওষুধকে প্রভাবিত করবে—চীন ও ভারত যে জেনেরিক ওষুধ সরবরাহ করে, তাতে কোনো প্রভাব পড়বে না।”

যুক্তরাষ্ট্রমুখী বিনিয়োগের চাপ

জাতিসংঘের কমট্রেড তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত ওষুধের ৬০ শতাংশই এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সরবরাহকারী ছিল সুইজারল্যান্ড (৯ শতাংশ)।

শুল্কের আশঙ্কায় বৈশ্বিক ওষুধ কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বহু বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, রোশ, ইলি লিলি, জনসন অ্যান্ড জনসন, নোভার্টিস ও সানোফি।

তাইওয়ানের এক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির সূত্র জানায়, নতুন কারখানা নির্মাণ ও সার্টিফিকেশন সম্পন্ন করতে অন্তত পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে। তিনি বলেন, “ভালো দিক হলো এটি বৈশ্বিক শুল্ক—দেশভিত্তিক নয়। ফলে প্রতিযোগিতায় সবাই একই পর্যায়ে থাকবে। তবে শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ রোগীরাই।”

এশিয়ার বাজারে পতন

জাপানে ওতসুকা হোল্ডিংস ৩.৫ শতাংশ এবং দাইইচি স্যাংকিও ১.৬ শতাংশ হারালেও তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যাল সামান্য ০.২ শতাংশ বেড়েছে এবং শিওনোগি ১.৩ শতাংশ লাভ করেছে। তাকেদার সিইও ক্রিস্টফ ওয়েবার জুলাই মাসে জানিয়েছিলেন, তাদের সবচেয়ে বড় উৎপাদন কেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্রে।

২০২৪ সালে জাপান যুক্তরাষ্ট্রে ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওষুধ রপ্তানি করেছিল।

হংকংয়ের হ্যাং স্যাং বায়োটেক সূচক প্রায় ১.৪ শতাংশ কমে যায়।

ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল সূচক ২.৬ শতাংশ নেমে যায়, যদিও দেশটির ওষুধ শিল্প প্রধানত জেনেরিক নির্ভর। তবুও শীর্ষ প্রতিষ্ঠান সান ফার্মার শেয়ার ৩.৪ শতাংশ কমে যায়।

অস্ট্রেলিয়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রী মার্ক বাটলার নতুন শুল্ককে “অন্যায্য ও অযৌক্তিক” বলে আখ্যা দেন। দেশটি গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২.১ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার (১.৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) মূল্যের ওষুধ রপ্তানি করেছিল।

অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম বায়োটেক কোম্পানি সিএসএল দুপুরের মধ্যে ২ শতাংশ হারায়, যদিও দিনের শুরুতে পতন ছিল ৫ শতাংশ পর্যন্ত। তবে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে “খুবই উল্লেখযোগ্য উৎপাদন সক্ষমতা” থাকায় শুল্কের প্রভাব তেমন পড়বে না।