Home অন্যান্য ফিলিপাইন : নারীদের চোখে দ্বীপের গল্প

ফিলিপাইন : নারীদের চোখে দ্বীপের গল্প

সাইয়েদ আহমেদ:

ফিলিপাইন এক বিস্ময়কর দ্বীপরাজ্য, যেখানে সমুদ্রের নীল জল, সাদা বালির সৈকত আর পাহাড়ি সবুজ মিলে সৃষ্টি করেছে এক অনন্য স্বর্গরাজ্য। ভ্রমণকারীর চোখে এই দেশ মানে রঙ, সুর আর জীবনের উচ্ছ্বাস। কিন্তু যেটি সত্যিই ফিলিপাইনকে আলাদা করে তোলে, তা হলো এখানকার নারী সমাজ। তারা শুধু পরিবার ও সমাজের শক্ত ভিত্তি নন, বরং দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রাণও বটে।

মানিলার কোলাহল থেকে শুরু করে সেবুর ঐতিহ্যবাহী গ্রাম কিংবা পালাওয়ানের নির্জন দ্বীপ—প্রত্যেক জায়গায় নারীদের অবদান স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। বাজারে দাঁড়িয়ে টাটকা সামুদ্রিক মাছ বিক্রি করা তরুণী, স্কুলগামী শিশুদের হাত ধরে হাঁটতে থাকা মা কিংবা উৎসবের দিনে রঙিন পোশাকে সাজানো কিশোরী—সবাই যেন ফিলিপাইনের জীবনধারাকে আরও বর্ণময় করে তোলে।

ফিলিপাইনের নারীরা অনেকটা সংগ্রামী যোদ্ধার মতো। তাদের জীবনের পথচলা সহজ নয়। অনেক নারী সংসার চালাতে বিদেশে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন এবং কষ্টার্জিত অর্থ দেশে পাঠিয়ে পরিবারকে নতুনভাবে গড়ে তোলেন। আবার অনেকে স্থানীয় পর্যায়ে শিক্ষকতা, স্বাস্থ্যসেবা কিংবা ব্যবসায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। গ্রামাঞ্চলে নারীদের দেখা যায় ধানক্ষেতে শ্রম দিচ্ছেন, আবার শহরে তরুণীরা আধুনিক অফিসে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ এক অনন্য বৈপরীত্য, যা ফিলিপাইনের নারীর শক্তি ও স্থিতিশীলতাকে প্রতিফলিত করে।

ভ্রমণের পথে যখন কোনো গ্রামীণ উৎসবের দেখা মেলে, তখন চোখে পড়ে নারীদের হাতে ফুল আর চোখে আনন্দের দীপ্তি। ঐতিহ্যবাহী নাচ-গানে তাদের অংশগ্রহণ যেন দ্বীপের গল্প বলে যায়। একেকজন নারী যেন জীবন্ত কবিতা, যার ছন্দে মিশে থাকে সংগ্রাম ও সৌন্দর্য। স্থানীয় মানুষের আতিথেয়তায়ও নারীর ভূমিকা অপরিসীম। ভ্রমণকারীর প্রতি আন্তরিক আচরণ, হাসিমাখা মুখ আর অবিরাম কথোপকথন ভ্রমণকে করে তোলে আরও স্মরণীয়।

নারীদের জীবনযাত্রার ভেতরে আছে সরলতা ও দৃঢ়তা। তারা পরিবারের জন্য রান্না করেন, শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেন, আবার সমাজের নানা সমস্যারও সমাধান করেন। প্রতিদিনের ছোট ছোট কাজে তারা ফিলিপাইনকে এগিয়ে নিচ্ছেন। এমনকি প্রাকৃতিক দুর্যোগেও নারীরাই প্রথমে পরিবারকে রক্ষা করেন, ঘরবাড়ি গুছিয়ে নতুনভাবে জীবন শুরু করেন।

ফিলিপাইন ভ্রমণ শেষে মনে হয়, এখানকার সৌন্দর্য শুধু দ্বীপ, সমুদ্র বা পাহাড়ে নয়। মূল সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে নারীদের চোখে, তাদের হাসিতে, তাদের সংগ্রামে। এই দেশের মূল সুর আসলে নারীর হাতে লেখা এক নীরব কবিতা, যা প্রতিটি ভ্রমণকারীর হৃদয়ে অমোচনীয় হয়ে থেকে যায়।