Home সারাদেশ শিশুকন্যার মৃত্যুতে পিতার কান্না, মায়ের সংসারে জীবন গেল খাদিজার

শিশুকন্যার মৃত্যুতে পিতার কান্না, মায়ের সংসারে জীবন গেল খাদিজার

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, যশোর: তিন বছরের ফুটফুটে কন্যাশিশু খাদিজা খাতুনের মৃত্যু ঘিরে স্তব্ধ হয়ে গেছে যশোর সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের তরফ সিংহ গ্রাম। বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনার পর গ্রামে নেমে এসেছে শোক ও ক্ষোভের ছায়া। এই শিশুটির মৃত্যু নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তা আরও বেদনাদায়ক, নিজ মা সামিয়া খাতুন ও সৎবাবা শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ এনেছেন পিতা হেলাল হোসেন।

শিশুটির পিতা হেলাল মনিরামপুর উপজেলার মাছনা গ্রামের বাসিন্দা। চার বছর আগে বিয়ে হয়েছিল সামিয়া ও হেলালের। সেই ঘরেই জন্ম খাদিজার। তবে দাম্পত্য জীবনে কলহ দেখা দিলে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। পরে সামিয়া পুনরায় বিয়ে করেন শহিদুল ইসলামকে এবং মেয়েকে নিয়ে ওঠেন নতুন সংসারে।

ঘটনার দিন ১৫ মে রাতে খাদিজা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে, এমনই দাবি শহিদুল ও সামিয়ার। তবে হেলালের অভিযোগ, মেয়ের অসুস্থতার অজুহাত দিয়ে আসলে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। শিশুটির মৃত্যুর খবরটি প্রথমে জানানো হয় খালার মাধ্যমে, রাত ১২টার দিকে। পরদিন সকালে হেলাল কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ অভিযোগ আমলে নিয়ে শহিদুলের বাড়ি থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

হেলালের কান্নাজড়ানো কণ্ঠে হৃদয়বিদারক বর্ণনা:

শনিবার দুপুরে হাসপাতালে শিশুকন্যার লাশ নিতে এসে হেলাল হোসেন বলেন, “ওর কপালে নীল দাগ ছিল। শরীরেও ছিল আঘাতের চিহ্ন। আমার বিশ্বাস, ওকে মারধর করা হয়েছে। মেয়েকে কখনও ভালোভাবে দেখতে দিত না সামিয়া। ফোন করলেও কথা বলাতে বাধা দিত। আজ আমার মেয়েটাকেই মেরে ফেলল।”

এই বক্তব্যের সময় হেলালের চোখে ছিল জল আর কণ্ঠে কান্নার ভার। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আত্মীয়রা বলছিলেন, সামিয়া নতুন সংসারে মেয়েকে ‘বোঝা’ হিসেবে দেখতেন। অভিযোগ আছে, শিশুটির যত্নে অবহেলা করা হতো এবং তাকে প্রায়ই মারধর করা হতো।

পুলিশ বলছে, তদন্ত চলছে:

কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল হাসনাত জানান, “১৬ মে সকালে অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠাই। শিশুটির দেহে কিছু অসঙ্গতি ছিল, যা সন্দেহ জাগিয়েছে। তাই সামিয়া ও শহিদুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তারা কিছুটা অসংলগ্ন আচরণ করছে। মামলা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।”

তিনি আরও জানান, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর হত্যার প্রকৃত কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা মিলবে। প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

গ্রামে তীব্র প্রতিক্রিয়া:

তরফ সিংহ গ্রামের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, শহিদুলের বাড়ি থেকে প্রায়ই শিশুটির কান্নার শব্দ শোনা যেত। কেউ কেউ বলছেন, সামিয়া মেয়েকে আগের সংসারের বোঝা মনে করতেন। প্রতিবেশী রওশন আরা বলেন, “মেয়েটাকে ঠিকমতো খাওয়ানো হতো না। একা একা খেলা করত। শহিদুল ওর দিকে তাকাত না বললেই চলে।”

এই ঘটনার পর গ্রামের মানুষ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। এ মৃত্যু শুধু একটি শিশুর জীবনের অবসান নয়, বরং সমাজে পারিবারিক অবহেলা ও নির্মমতার একটি নির্মম প্রতিচ্ছবি।

প্রতিবেদন শেষ হলেও প্রশ্ন রয়ে যায়:

মা ও সৎবাবার সংসারে এতটুকু নিরাপত্তাও পেল না ছোট্ট খাদিজা। তার মুখে কখনও উচ্চারিত হয়নি অভিযোগ, কিন্তু শরীরে জমা হয়েছে অনেক নির্যাতনের চিহ্ন। বাবার কাঁধে শেষ যাত্রায় পাড়ি দেওয়ার আগে তার শরীর হয়তো বলেছিল অনেক কিছু, যা সমাজ ও প্রশাসনকে ভাবায়।