Home অন্যান্য বউ চুরি: ভালোবাসা না অপহরণ?

বউ চুরি: ভালোবাসা না অপহরণ?

বিনোদন ডেস্ক: কাজাখস্তান ও কিরগিজস্তানের গ্রামীণ সমাজে এখনও টিকে আছে এক বিস্ময়কর ও বিতর্কিত বিয়ের রীতি—“বউ চুরি” বা স্থানীয়ভাবে যাকে বলা হয় “ala kachuu” (কিরগিজ ভাষায় যার অর্থ ‘ধরো আর পালাও’)। আধুনিক বিশ্বে যেখানে নারীর সম্মতি ও অধিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সেখানে এই রীতির অস্তিত্ব যেন সময়কে পিছিয়ে নিয়ে যায়।
কিভাবে ঘটে এই বিয়ে?

পাত্র ও তার বন্ধুরা হঠাৎ করে একটি পরিকল্পনা করে—যেন সিনেমার দৃশ্য। তারা পছন্দের মেয়েটিকে রাস্তা, বাজার কিংবা ক্ষেতখামার থেকে অপহরণ করে। এরপর সরাসরি ছেলেটির বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আগে থেকেই একদল নারী অপেক্ষা করে থাকে—তারা মেয়েটিকে ঘরের এক কোণে বসিয়ে দেয়, মাথায় সাদা কাপড় পরিয়ে দিয়ে তাকে বরকে ‘স্ত্রী’ হিসেবে চিহ্নিত করে।

সম্মতির বিষয়?

অনেক সময় মেয়েটি সম্মত হয়, বিয়ে আগে থেকেই ঠিক করা থাকে। কিন্তু বেশি বিতর্কিত ঘটনাগুলো হয় তখন, যখন মেয়েটি রাজি না থেকেও তাকে জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর পরিবারকে খবর দেওয়া হয়—“আপনার মেয়ে এখন আমাদের পরিবারের পুত্রবধূ”।

অনেক মেয়েই এই পরিস্থিতির চাপে পড়ে থেকে যায়—সমাজে ফিরে গেলে ‘অসম্মানিত’, আর পরিবারের কাছে ফিরে যেতে হলে অপমান সইতে হয়।

ঐতিহ্য না নির্যাতন?

পুরনো দিনে এই রীতির পেছনে ছিল প্রেম ও সাহসিকতার গল্প। ছেলেমেয়ের পরিবার রাজি না হলে তারা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এই রীতি অনেক সময় হয়ে উঠেছে একরকম অপহরণ, বিশেষ করে মেয়ের সম্মতি না থাকলে।

আইনগত দিক

কাজাখস্তান ও কিরগিজস্তান—দুই দেশেই এই রীতি এখন অবৈধ। মেয়ের সম্মতি ছাড়া বিয়ে করানো এখন দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু আইন থাকলেও, গ্রাম ও দুর্গম অঞ্চলে এই রীতি এখনো সমাজের ছায়ায় টিকে আছে।

সাংস্কৃতিক চিত্র

বউ চুরির পর বর পক্ষ উৎসব করে, মাংস রান্না হয়, সবাই খুশি। কিন্তু মেয়েটির চোখে লুকানো থাকে ভয়, অবিশ্বাস, এবং বহু প্রশ্ন—এ জীবন কি সে নিজে বেছে নিয়েছে?

এই রীতি আজও দুই সমাজে তীব্র বিতর্কের জন্ম দেয়। কেউ বলেন, এটি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ; আবার কেউ বলেন, এটি নারীর স্বাধীনতার ওপর এক নিষ্ঠুর আঘাত।