কৃষ্ণা বসু, কলকাতা: মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ পুনর্নির্মাণ’-এর শিলান্যাস ঘিরে শনিবার সকাল থেকেই উত্তেজনা ও কৌতূহল ছড়ায় রেজিনগর এলাকায়। সাসপেন্ডেড তৃণমূল নেতা ও ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে শিলান্যাস করেন। এই ঘোষণার পর থেকেই স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কড়া নজরদারি শুরু করে।
সকাল থেকে শিলান্যাসস্থলে ছিল ব্যস্ততা, মঞ্চ ও সাময়িক তোরণ নির্মাণ, মাইকে ঘোষণা, স্থানীয় নেতৃত্বের আগমন—সব মিলিয়ে এলাকা নিয়ে নেয় উৎসবমুখর চেহারা। তবে আয়োজকদের পাশাপাশি প্রশাসনও ছিল সর্বোচ্চ সতর্কতায়। পুরো রেজিনগর জুড়ে মোতায়েন করা হয় ব্যাপক পুলিশবাহিনী। উপস্থিত ছিল RAF-এর দলও, যাতে কোনও রকম অশান্তি বা উত্তেজনা সৃষ্টি না হয়।
শিলান্যাস অনুষ্ঠানে মানুষের ঢল নামে। রেজিনগর ও সংলগ্ন গ্রামগুলো থেকে হাজারো মানুষ সমবেত হন। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে এই ঘোষণার বিষয়ে আলোচনা চলছিল, তাই অনুষ্ঠানের খবর ছড়াতেই জনসমাগম দ্রুত বাড়ে।
বিধায়ক হুমায়ুন কবীর শিলান্যাসের সময় ধর্মীয় সম্প্রীতির বার্তা দেন। তিনি দাবি করেন, এই উদ্যোগ কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, বরং “ন্যায় ও ঐতিহ্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠা” হিসেবে দেখা উচিত। যদিও রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়ার পর হুমায়ুন কবীরের এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
অনুষ্ঠান চলাকালীন কোনও অশান্তির খবর পাওয়া যায়নি। তবে প্রশাসন এখনও সতর্ক রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। শিলান্যাসের পর এলাকা জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে ভবিষ্যতে এই নির্মাণ প্রকল্প কীভাবে কাঠামো পাবে, এবং তা ঘিরে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশে কী প্রভাব পড়বে।
বিপুল জনসমাগম হয়েছে এই মসজিদের শিলান্যাস ঘিরে। মদিনা থেকে এসেছেন দুইজন মৌলবী। বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন ঘিরে এলাহি আয়োজন যেমন করা হয়েছে, তেমনই কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
হুমায়ুন কবীর আগেই জানিয়েছিলেন, বাবরি মসজিদের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপনের অনুষ্ঠানে প্রায় ৩ লক্ষ মানুষের সমাগম হবে। ইসলামের পবিত্র স্থান, মদিনা থেকে দুইজন অতিথ আজ সকালেই এসে পৌঁছেছেন। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বিশেষ কনভয়ে তাদের আনা হয়েছে। অন্যদিকে, সন্দেশখালি, ক্যানিং সহ দূরদূরান্ত থেকে বহু সংখ্য়ালঘু মানুষ মাথায় ইট বয়ে আনছেন ভিত্তিপ্রস্থরের জন্য।
বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপনকে কেন্দ্র করে এলাহি খাওয়া-দাওয়ারও আয়োজন করা হয়েছে। প্রায় লাখের কাছাকাছি মানুষের জন্য শাহী বিরিয়ানির আয়োজন করা হয়েছে। বিরিয়ানি তৈরির বরাত পেয়েছে মুর্শিদাবাদের সাতটি ক্যাটারিং।
হুমায়ুন ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ৪০ হাজার অতিথির জন্য বিরিয়ানির প্যাকেট এবং এলাকাবাসীর জন্য আরও ২০ হাজার প্যাকেট বিরিয়ানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুধু খাবারের ব্যবস্থাতেই ৩০ লক্ষ টাকা খরচ হবে। সভামঞ্চ ও অন্যান্য খরচও ৬০-৭০ লক্ষ টাকা পার করছে। ৪০০ অতিথির বসার জন্য ১৫০ ফিট দীর্ঘ মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে, যার খরচ পড়েছে ১০ লাখ টাকা।










