তারিক-উল-ইসলাম, ঢাকা: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া জোরদার করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এরই অংশ হিসেবে আজ রবিবার (২৫ অক্টোবর) চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনসহ চট্টগ্রাম বিভাগের মোট ৩৬টি আসনের প্রায় অর্ধশত মনোনয়নপ্রত্যাশীকে তলব করা হয়েছে দলের গুলশান কার্যালয়ে।
সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। এই বৈঠকের মাধ্যমেই চট্টগ্রামে প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়ে ‘সবুজ সংকেত’ আসতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
নেতৃত্বের বার্তা ও কোন্দল নিরসনের চেষ্টা:
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলার ১৬টি আসনের মধ্যে অন্তত ১০টিতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিদ্যমান। এই প্রতিযোগিতা মাঠপর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভাজন এমনকি কোথাও কোথাও সংঘাতের জন্ম দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দলের নীতিনির্ধারকরা কোন্দল নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশেষভাবে সচেষ্ট। এই সমস্যা নিরসনে ইতোপূর্বে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম সমস্যাযুক্ত আসনগুলোর মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকগুলোতে প্রত্যাশীরা নিজেদের মতামত তুলে ধরেন এবং হাইকমান্ডের ঐক্যের বার্তা তাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, আজকের বৈঠকে মূল বার্তা থাকবে দলের একক প্রার্থী ঘোষণার পর যেন মনোনয়নবঞ্চিতরা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে না যান এবং নির্বাচিত প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেন। তারেক রহমানের ভার্চুয়াল উপস্থিতি এই বার্তাটিকে আরও জোরালো করবে বলে মনে করছেন অনেকে।
প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া:
দলীয় সূত্রমতে, একাধিক জরিপ এবং দায়িত্বশীল নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত। তবে আজকের বৈঠকের পর আনুষ্ঠানিকভাবে বা অনানুষ্ঠানিকভাবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেওয়া হতে পারে। নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার ইঙ্গিত থাকলেও, জোটগত কারণে চট্টগ্রামের কয়েকটি আসন ছেড়ে দিতে হতে পারে বলেও গুঞ্জন রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের আসনসমূহ:
আজকের বৈঠকে চট্টগ্রাম জেলার ১৬ আসন, কক্সবাজারের ৪ আসন, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ৩ আসন (প্রত্যেক জেলা থেকে ১টি করে), নোয়াখালীর ৬ আসন, লক্ষ্মীপুরের ৪ আসন এবং ফেনীর ৩ আসনসহ মোট ৩৬টি সংসদীয় আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। চট্টগ্রামের ১৬ আসন থেকে প্রায় ৪৫ জন প্রত্যাশীকে ফোন করে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
প্রত্যাশীদের ঢাকায় আগমন ও মনোভাব:
চট্টগ্রাম জেলার একাধিক আসনের বেশ কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী জানিয়েছেন, তারা কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা আবদুস সাত্তার পাটওয়ারী বা অন্য নেতাদের কাছ থেকে ফোন পেয়েছেন। বেশিরভাগ প্রত্যাশী শনিবার রাতেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন, কেউ কেউ আজ সকালের ফ্লাইটে আসার কথা জানিয়েছেন। সবাই মনোনয়ন পাওয়ার আশা নিয়ে এই বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে দলের আন্দোলন-সংগ্রামে সম্পৃক্ত থাকা, অসংখ্য মামলার আসামি হওয়া এবং জেল খাটার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তারা আশা করছেন, দল তাদের ত্যাগ ও অবদান বিবেচনা করবে।
সন্দ্বীপ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু তাহের বলেন, “নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য দলের নেতাদের ঐক্যের বিকল্প নেই। আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী, তবে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে কাজ করে যাব।” রাউজান থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির নেতা জসিম উদ্দীন সিকদার বলেন, “গতবার দলের মনোনয়ন নিয়ে রাউজান থেকে সংসদ নির্বাচন করেছিলাম। ভোট চুরির নির্বাচনে সারা দেশের মতো রাউজানেও আমাকে পরাজিত করা হয়েছে। এবারও দল থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী।”
নেতৃত্বের সতর্কবার্তা:
বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ আগস্টের পট-পরিবর্তনের পর নেতাদের জন্য মাঠপর্যায়ে তৎপরতা চালানোর বাধা কেটেছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আগ্রহী নেতারা তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। কিন্তু প্রতিটি আসনে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকায় অন্তর্কলহ বেড়েছে। বিশেষ করে রাউজান, মিরসরাই, সন্দ্বীপ, আনোয়ারা, বাঁশখালী ও পটিয়া আসনগুলোয় সমস্যা বেশি প্রকট। নীতিনির্ধারকরা জোর দিচ্ছেন যেন দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর ভোটের মাঠে এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। এছাড়া, ব্যক্তি আক্রোশের বশে কেউ যেন দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি না করেন, সে বিষয়েও কঠোরভাবে সতর্ক করা হবে।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। নির্বাচনের মাত্র ৪ মাস বাকি থাকলেও এখনও চট্টগ্রামে প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি দেশের বৃহত্তম এই দলটি। তবে আজকের বৈঠকের মধ্য দিয়ে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটতে চলেছে বলে আশা করা হচ্ছে।










