বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, লোহাগাড়া: দীর্ঘ তিন দশকের রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টে গেল চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে। তথাকথিত ‘জামায়াতের দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত এই জনপদে দীর্ঘ ২৯ বছর পর জোটের রাজনীতির বৃত্ত ভেঙে নিজস্ব প্রার্থী ঘোষণা করল বিএনপি। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নবাগত মুখ ও সাবেক ছাত্রনেতা নাজমুল মোস্তফা আমিনের হাতেই তুলে দেওয়া হলো ধানের শীষের প্রতীক।
২৯ বছরের অপেক্ষার অবসান
১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বশেষ এই আসনে বিএনপির নিজস্ব প্রার্থী ছিলেন কর্নেল (অব.) অলি আহমদ (বীর বিক্রম)। এরপরের ইতিহাস শুধুই জোটের রাজনীতির। ২০০১, ২০০৮ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের সমীকরণে এই আসনটি বারবার ছেড়ে দেওয়া হয়েছে শরিক দল জামায়াতে ইসলামীকে। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে ধানের শীষের নিজস্ব কোনো মাঝি ছিল না সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায়। এবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেই প্রথা ভেঙে বিএনপি বেছে নিয়েছে দলের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত কর্মী নাজমুল মোস্তফা আমিনকে।
হেভিওয়েট বনাম নতুনের লড়াই
নির্বাচনী মাঠে নাজমুল মোস্তফা আমিনের প্রধান প্রতিপক্ষ জামায়াতের হেভিওয়েট প্রার্থী ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী। অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ শাহজাহান চৌধুরীর বিপরীতে নাজমুল মোস্তফা আমিন সংসদীয় রাজনীতিতে একেবারেই নতুন মুখ। তবে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মতে, নাজমুল ছাত্রদলের সক্রিয় রাজনীতি থেকে উঠে আসা নেতা। তিনি লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। নতুন উদ্দীপনা এবং তারুণ্যের শক্তিই এই কঠিন লড়াইয়ে তাঁর প্রধান হাতিয়ার।
তৃণমূলে আনন্দের জোয়ার
দলীয় প্রতীক ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বসিত সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ার বিএনপি নেতাকর্মীরা। দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ফৌজুল কবির ফজলু জানান, “কৌশলগত কারণে দীর্ঘদিন আমরা জোটের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছি। কিন্তু কর্মীরা সবসময় নিজস্ব প্রার্থী প্রত্যাশা করেছে। ২৯ বছর পর সেই আশা পূরণ হওয়ায় আমরা ধানের শীষকে বিজয়ী করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।”
কী বলছেন নাজমুল মোস্তফা?
মনোনয়ন পাওয়ার পর নাজমুল মোস্তফা আমিন বলেন, “গত ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম। দেশনায়ক তারেক রহমানের রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিয়েছি। দল আমার শ্রমের মূল্যায়ন করেছে। ইনশাআল্লাহ, ভেদাভেদ ভুলে নেতাকর্মীদের নিয়ে এই আসনটি দেশনেত্রীকে উপহার দেব।”
মনোনয়ন দৌড়ে যারা ছিলেন
এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মো. মহিউদ্দিন, সাতকানিয়া উপজেলার সাবেক আহ্বায়ক জামাল হোসেন এবং মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যানের মতো নেতারা। তবে শেষ পর্যন্ত দলের হাইকমান্ড আস্থা রেখেছে নাজমুল মোস্তফার ওপর।
রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক শূন্যতা কাটিয়ে বিএনপির নিজস্ব প্রার্থী ঘোষণা নির্বাচনী মাঠে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করবে। এখন দেখার বিষয়, জামায়াতের দুর্গে ধানের শীষের এই নতুন কান্ডারি কতটা সফল হতে পারেন।










