এভিয়েশন ডেস্ক: লন্ডনের সাউথএন্ড বিমানবন্দরে এক ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে গোটা এলাকায়। ছোট আকারের একটি যাত্রীবাহী বিমান উড্ডয়নের মাত্র কয়েক সেকেন্ড পরই ভারসাম্য হারিয়ে মাটিতে আছড়ে পড়ে এবং আগুনে ভস্মীভূত হয়। দুর্ঘটনার সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত যাত্রীরা সেই ভয়াবহ মুহূর্তের প্রত্যক্ষদর্শী হয়েছেন। বিমানবন্দর আপাতত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
রবিবার বিকেলে বিমানটি যখন সাউথএন্ড বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল, তখন অনেক যাত্রী পাইলটদের উদ্দেশে হাত নাড়েন এবং পাইলটরাও প্রত্যুত্তরে হাত নাড়েন বলে জানিয়েছেন যাত্রী জন জনসন, যিনি তাঁর পরিবারসহ সেসময় বিমানবন্দরে ছিলেন। তাঁর ভাষায়, “উড্ডয়নের তিন চার সেকেন্ড পরই বিমানটি বাঁ দিকে হেলে পড়ে, তারপর উল্টে গিয়ে মাথা নিচু করে মাটিতে বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে একটি বিশাল আগুনের গোলা তৈরি হয়। আমরা সবাই হতবাক হয়ে যাই। শিশুরাও পুরো ঘটনাটি দেখেছে।”
বিমানটি ছিল ডাচ প্রতিষ্ঠান জিউশ এভিয়েশনের, এবং এটি সাউথএন্ড থেকে লেলিস্ট্যাডের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটি নিশ্চিত করেছে যে তাদের ফ্লাইট এস ইউ জেড এক বিধ্বস্ত হয়েছে।
বিমান দুর্ঘটনার পরপরই সাউথএন্ড বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে, বিমানবন্দরটি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তাদের বিবৃতিতে জানানো হয়, “সাউথএন্ড বিমানবন্দরে আজকের গুরুতর দুর্ঘটনার কারণে দুঃখের সঙ্গে জানানো যাচ্ছে যে বিমানবন্দরটি সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। আগামীকাল যারা যাত্রা করার কথা ভেবেছেন, তাঁদের নিজ নিজ এয়ারলাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে।”
ইজিজেট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের সব ফ্লাইট অন্য বিমানবন্দরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে অথবা বাতিল করা হয়েছে। ব্রিটেনের পরিবহন সচিব হেইডি আলেকজান্ডার এক বিবৃতিতে জানান, “এই দুর্ঘটনায় যারা জড়িত, তাঁদের সবার জন্য আমি দুঃখিত। জরুরি বিভাগ ঘটনাস্থলে কাজ করছে। জনগণকে অনুরোধ করা হচ্ছে এলাকা এড়িয়ে চলতে।”
দুর্ঘটনার সময় রচফোর্ড হানড্রেড গলফ ক্লাবে কর্মরত এক ব্যক্তি জানান, “আমি তখন মাঠের মাঝামাঝি একটি কুঁড়েঘরে ছিলাম। হঠাৎ করেই শরীরজুড়ে প্রচণ্ড উত্তাপ অনুভব করি। মাথা তুলে দেখি, আকাশে বিশাল এক আগুনের গোলা। সেই উত্তাপ শরীরকে যেন পুড়িয়ে দিচ্ছিল।”
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ রচফোর্ড হানড্রেড গলফ ক্লাব খালি করে ফেলে, কারণ এটি বিমানবন্দরের খুব কাছাকাছি অবস্থিত।
এখনও পর্যন্ত হতাহত কারও নাম নিশ্চিতভাবে প্রকাশ করা হয়নি। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ঘটনাটি এতটা হঠাৎ ও ভয়াবহ ছিল যে কেউ বেঁচে আছে কি না, তা নিয়েই সন্দেহ রয়েছে।
ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ব্রিটেনের এয়ার অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্রাঞ্চ। পুরো এলাকা ঘিরে রাখা হয়েছে এবং সেখানে সাধারণ মানুষকে না যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।