Home Second Lead বিশ্ববাজারে ডলারের পতন, ইউরো-পাউন্ড-ইয়েনের উল্লম্ফন

বিশ্ববাজারে ডলারের পতন, ইউরো-পাউন্ড-ইয়েনের উল্লম্ফন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে মার্কিন ডলারের বিপরীতে বিশ্বমুদ্রাগুলোর শক্তিশালী উত্থান নজিরবিহীন মাত্রায় পৌঁছেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন মেয়াদের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের এককেন্দ্রিক বাণিজ্যনীতি, শুল্ক আরোপ এবং সরকারি ঋণব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে গেছে ডলারের প্রতি। এরই মাঝে ইউরো, পাউন্ড, ইয়েনসহ একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বী মুদ্রা ক্রমাগত শক্তিশালী হয়ে উঠছে—যা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও শীর্ষ অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যানুসারে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মুদ্রা ইউরো (EUR) চলতি বছরের প্রথমার্ধে ডলারের বিপরীতে প্রায় ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। দীর্ঘদিন পর ইউরোর এমন স্থিতিশীল উত্থান বিশ্ববাজারে ইউরোপের অর্থনৈতিক ও নীতিগত স্থিতিশীলতার প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ইউরো-ডলার বিনিময় হার ১ দশমিক ২০ ছুঁতে পারে।

অন্যদিকে, ব্রিটিশ পাউন্ডও  ডলারের বিপরীতে প্রায় ১১ দশমিক ৩ শতাংশ পর্যন্ত শক্তিশালী হয়েছে। যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক স্থিতি ও বাণিজ্যিক খাতের চাঙ্গাভাব এ প্রবণতার পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। পাউন্ডের মান এখন ১ দশমিক ৩৫ থেকে ১ দশমিক ৩৭ ডলারের মধ্যে অবস্থান করছে।

এশিয়ার বড় অর্থনীতির দেশ জাপানের ইয়েন কিছুটা সংযত গতিতে হলেও ডলারের তুলনায় প্রায় ৯ শতাংশের বেশি শক্তিশালী হয়েছে। বর্তমানে ইয়েনের মান ১৪৩ থেকে ১৪৪ ইয়েনে অবস্থান করছে প্রতি ডলার। বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, ফেডারেল রিজার্ভের নীতিগত অনিশ্চয়তা ও ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতির কারণে ইয়েনের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে।

চীনের ইউয়ান তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থেকেছে। বর্তমান বিনিময় হার ৭ দশমিক ১৬ থেকে ৭ দশমিক ১৯ ইউয়ান প্রতি ডলারে দাঁড়িয়েছে। চীন সরকার একদিকে যেমন মুদ্রানীতিকে শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে, অন্যদিকে বিশ্ববাজারে তাদের রপ্তানিকেন্দ্রিক কৌশল ইউয়ানকে স্থিতিশীল রাখার সহায়ক হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ান ডলার , কানাডিয়ান ডলার  এবং সুইস ফ্র্যাঙ্ক -এর মতো অন্যান্য শক্তিশালী মুদ্রাগুলোও চলতি বছরে ডলারের বিপরীতে এগিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে সুইস ফ্র্যাঙ্ক এখন গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মানে পৌঁছেছে।

উঠতি বাজারের মুদ্রাগুলোর মধ্যে ভারতীয় রুপি, সিঙ্গাপুর ডলার ও ইন্দোনেশিয়ান রুপিয়াহ কিছুটা স্থিরতা বজায় রেখেছে। তবে ডলারের দুর্বলতা তাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্ব অর্থনীতিতে ডলারের একচ্ছত্র আধিপত্য এখন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ফেডের সুদের হার নিয়ে অনিশ্চয়তা, ট্রাম্প প্রশাসনের একক সিদ্ধান্ত এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যে আস্থা সংকট মুদ্রাবাজারে একটি কাঠামোগত পরিবর্তনের সূচনা করেছে। বিশ্বব্যাপী এখন নতুন করে চিন্তা করা হচ্ছে—ডলার ছাড়া অন্য মুদ্রার ওপর নির্ভরতা কতটা নিরাপদ ও কার্যকর হতে পারে।