Home কৃষি সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা কেন বাস্তবায়িত হচ্ছে না?

সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা কেন বাস্তবায়িত হচ্ছে না?

বিষের ছায়ায় কৃষি ও জনস্বাস্থ্য: পর্ব-৯

তারিক-উল-ইসলাম, ঢাকা: কীটনাশকের অপব্যবহার ও পরিবেশ–স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে থাকায় দেশে বহু বছর ধরে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা কার্যক্রম চলছে। সরকারি নির্দেশনা, মাঠপর্যায়ের প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও বাস্তবে এর সফলতা সীমিত। কৃষকরা এখনও মূলত রাসায়নিক নির্ভরই রয়ে গেছেন। তাই প্রশ্ন উঠছে—টেকসই বিকল্প থাকলেও তা মাঠে বাস্তবায়িত হচ্ছে না কেন?

সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মূল ধারণা হলো—রাসায়নিককে শেষ বিকল্প হিসেবে রাখা। তার আগে ব্যবহার করা হবে জৈব নিয়ন্ত্রণ, ফেরোমন ফাঁদ, আলো ফাঁদ, রোগ-পোকা শনাক্ত করে নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা, এবং পোকা সহনশীল জাত। কিন্তু মাঠপর্যায়ে দেখা যায়, অনেক কৃষক এসব পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত নন। কেউ কেউ আবার মনে করেন এগুলো সময়সাপেক্ষ এবং দ্রুত ফল দেয় না।

বহু কৃষক বলেন, ফেরোমন বা আলো ফাঁদ ব্যবহার করলে পোকা কিছুটা কমে, কিন্তু তারা নিশ্চিন্ত হতে পারেন না। বিপরীতে বাজারে দোকানদাররা প্রায়ই তাদের উচ্চমাত্রার কীটনাশকের পরামর্শ দেন। ফলে কৃষক দ্রুত ফলের আশায় রাসায়নিক পদ্ধতিই বেছে নেন।

কৃষি দপ্তরের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও অনেক এলাকায় সীমিত। অনেক উপজেলা অফিসে জনবল কম, কোথাও প্রশিক্ষণের ধারাবাহিকতা নেই। কৃষকদের মতে, মৌসুমের শুরুতেই নিয়মিত মাঠসভা, প্রদর্শনী প্লট বা হাতে–কলমে প্রশিক্ষণ হলে তারা বিকল্প পদ্ধতির ওপর বেশি আস্থা পেতেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার সফলতা নির্ভর করে কৃষকের আস্থার ওপর। তারা যদি দেখেন জৈব বা যান্ত্রিক পদ্ধতি বাস্তবে কার্যকর, তবে ধীরে ধীরে রাসায়নিকের ওপর নির্ভরতা কমবে। কিন্তু বর্তমানে বাজারে কীটনাশকের সহজলভ্যতা এবং আগ্রাসী প্রচার কৃষকদের ধারণা বদলে দিয়েছে।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা শুধু পোকা দমনের কৌশল নয়—এটি একটি টেকসই কৃষি–ভাবনা। মাটির উর্বরতা রক্ষা, পানি দূষণ কমানো, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন—সবই এর লক্ষ্য। তবে শক্তিশালী নীতিগত সহায়তা, বাজার নিয়ন্ত্রণ ও কৃষকের উপযোগী প্রশিক্ষণ ছাড়া এটি সফল হবে না।

তাদের মতে, কৃষিনির্ভর দেশে রাসায়নিকের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর ক্ষতি ডেকে আনবে। তাই ধাপে ধাপে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার বিস্তার এখন জরুরি।