বুধবার থেকে তিনি চিকিৎসায় খুব একটা সাড়া দিচ্ছিলেন না। তবে শনিবার তিনি অল্প কিছু কথা বলেছেন এবং হাত-পা নাড়াতে পারছেন। বর্তমানে তাঁকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তাঁর কিডনি জটিলতা নিরসনে নিয়মিত ডায়ালাইসিস চলছে। শনিবার রাতেও তাঁর একটি ডায়ালাইসিস সম্পন্ন হয়েছে, যার পর তাঁর শারীরিক অবস্থায় কিছুটা স্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা গেছে।
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা টানা তিন দিন ধরে প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল হলেও তিনি এখনো শঙ্কামুক্ত নন। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার জোর প্রস্তুতি চললেও মেডিকেল বোর্ডের অভিমত, এই মুহূর্তে বিদেশ ভ্রমণের ধকল সামলানোর মতো শারীরিক সক্ষমতা তাঁর নেই।
এদিকে বেগম জিয়ার চিকিৎসার সুবিধার্থে সোমবার (১ ডিসেম্বর) চীন থেকে একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।
শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থার গত তিন দিনে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি। গত ২৩ নভেম্বর ফুসফুসে সংক্রমণ ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। পরবর্তীতে তাঁর নিউমোনিয়া ধরা পড়ে।
মেডিকেল বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার থেকে তিনি চিকিৎসায় খুব একটা সাড়া দিচ্ছিলেন না। তবে শনিবার তিনি অল্প কিছু কথা বলেছেন এবং হাত-পা নাড়াতে পারছেন। বর্তমানে তাঁকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তাঁর কিডনি জটিলতা নিরসনে নিয়মিত ডায়ালাইসিস চলছে। শনিবার রাতেও তাঁর একটি ডায়ালাইসিস সম্পন্ন হয়েছে, যার পর তাঁর শারীরিক অবস্থায় কিছুটা স্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা গেছে।
বোর্ডের একজন সদস্য জানান, হৃদযন্ত্রের জটিলতা এবং অগ্ন্যাশয়ের তীব্র প্রদাহ পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। লিভার, আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসের পুরনো সমস্যাগুলোও ভোগাচ্ছে। আগামী কয়েক দিন তাঁর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। বিশেষ করে কিডনির কার্যক্ষমতায় স্থিতিশীলতা ফিরে আসাটা জরুরি।
মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার বলেন, “ম্যাডাম স্থিতিশীল থাকলেও এখনো শঙ্কামুক্ত নন।” ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. জাহিদ হোসেনও জানিয়েছেন, গত তিন দিনে অবস্থার তেমন কোনো হেরফের হয়নি।
বিদেশে চিকিৎসা ও প্রস্তুতি
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবার জানিয়েছেন, বেগম জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার যাবতীয় প্রস্তুতি চলছে। তিনি বলেন, “ম্যাডাম এখনো সংকটাপন্ন অবস্থায় আছেন। তাঁকে বিদেশে নেওয়ার জন্য ভিসা প্রক্রিয়া, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ এবং এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়ে কাজ চলছে।”
পারিবারিকভাবে তাঁকে লন্ডন অথবা সিঙ্গাপুরে নেওয়ার আগ্রহ থাকলেও চীন থেকেও চিকিৎসার প্রস্তাব এসেছে। কুয়েত ও সিঙ্গাপুরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। তবে চিকিৎসকরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বর্তমান শারীরিক অবস্থায় তাঁকে বিমানে তোলার মতো ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব নয়। মেডিকেল বোর্ড ও তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতির ওপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে।
বিদেশি চিকিৎসকদের পরামর্শ
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব ও চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়মিত অনলাইনে যোগাযোগ রাখছে। এরই অংশ হিসেবে সোমবার চীনের চিকিৎসক দলটি ঢাকায় এসে তাঁর শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
