অস্তমিত এক কালজয়ী নক্ষত্র
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি,ঢাকা: আজ মঙ্গলবার ভোরে কুয়াশার চাদরে ঢাকা প্রকৃতি যখন জাগছিল, ঠিক তখনই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এক স্তব্ধ করে দেওয়া দুঃসংবাদ। দীর্ঘ লড়াই আর অদম্য সাহসের প্রতীক, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকাল ৬টায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
শেষ মুহূর্তের সেই বিষণ্ণ প্রহর:
গতকাল সোমবার গভীর রাত থেকেই রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে জমা হতে শুরু করেছিল নেতাকর্মীদের ভিড়। সবার চোখেমুখে ছিল উৎকণ্ঠা আর প্রার্থনা। রাত ২টার পর মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন যখন জানান, ম্যাডাম ‘অত্যন্ত সংকটময় সময় অতিক্রম করছেন’, তখন থেকেই কান্নার রোল পড়ে যায় উপস্থিত সাধারণ মানুষের মধ্যে। ভোর পর্যন্ত হাসপাতালের করিডোরে নির্জুম হয়ে বসে ছিলেন পরিবারের সদস্যরা। তারেক রহমান, ডা. জুবাইদা রহমান এবং অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের কান্নায় হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। অবশেষে ভোরের আলো ফোটার আগেই নিভে গেল এক মহীয়সী রাজনীতিকের জীবনপ্রদীপ।
শোকাতুর বাংলাদেশ: স্তব্ধ জনপদ:
বেগম জিয়ার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে গোটা দেশে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম—সর্বত্রই সাধারণ মানুষের চোখে পানি। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে পাড়ার মোড়, সবখানে একটাই আলোচনা—একটি যুগের অবসান হলো।
রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে সাধারণ মানুষকে অঝোরে কাঁদতে দেখা গেছে। পল্টন মোড়ে দাঁড়িয়ে ষাটোর্ধ্ব এক রিকশাচালক শার্টের হাতায় চোখ মুছতে মুছতে বলছিলেন, “মা চলে গেলেন, আমাদের দুঃখ দেখার মতো আর কেউ রইল না।” সাধারণ মানুষ বলছে, তিনি ছিলেন গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী, যার অভাব কোনোদিন পূরণ হবার নয়।
এক নজরে বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণ
| তথ্য | বিস্তারিত |
| মৃত্যুর সময় | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, সকাল ৬:০০ মিনিট |
| স্থান | এভারকেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা |
| বয়স | ৮০ বছর |
| দীর্ঘদিনের অসুস্থতা | লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, কিডনি ও ডায়াবেটিস জটিলতা |
| অবস্থান | তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন |
একটি রাজনৈতিক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি:
বেগম খালেদা জিয়া কেবল একজন রাজনৈতিক নেত্রী ছিলেন না, তিনি ছিলেন কোটি মানুষের আস্থার শেষ ঠিকানা। তার ‘আপসহীন’ উপাধিটি কেবল রাজনৈতিক স্লোগান ছিল না, বরং তার জীবনের প্রতিফলন ছিল। দীর্ঘ রোগভোগ আর কারাবরণের কষ্টের মাঝেও তিনি মাথানত করেননি। তার এই চলে যাওয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি করল, যা অপূরণীয়।
হাসপাতাল চত্বর এখন নেতাকর্মীদের গগনবিদারী কান্নায় প্রকম্পিত। হাজার হাজার মানুষ প্রিয় নেত্রীকে শেষবারের মতো দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বইছে শোকের মাতম। দলমত নির্বিশেষে সবাই আজ তাকে স্মরণ করছেন শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায়।









