বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কলকাতা: ভারতের কেরালা উপকূলে লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী কার্গো জাহাজ এমএসসি এলসা-৩ ডুবে যাওয়ার ঘটনায় উপকূলীয় এলাকায় ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সমুদ্রে ভেসে পড়েছে বিপজ্জনক রাসায়নিক, প্লাস্টিক প্যালেট (নর্ডলস) এবং বিপুল পরিমাণ তেল। ইতিমধ্যে কেরালা সরকার রাজ্যজুড়ে পরিবেশগত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।
জাহাজটিতে ছিল ৬৪০টি কনটেইনার্ ছিল। এগুলোর যার মধ্যে ১৩টিতে ছিল মারাত্মক রাসায়নিক পদার্থ, প্রধানত ক্যালসিয়াম কার্বাইড এবং হাইড্রাজিনভিত্তিক প্লাস্টিক। এছাড়া জাহাজটিতে ছিল ৮৪ টন ডিজেল ও ৩৬৭ টন ফার্নেস অয়েল, যা ইতিমধ্যে সাগরের জলে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে, তেল ছড়িয়ে পড়ার ফলে উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোর জীববৈচিত্র্য এবং বাস্তুসংস্থান মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে।
উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ও আন্তর্জাতিক সহায়তা:
কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের নির্দেশে গঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের বিশেষজ্ঞ প্যানেল। এতে অংশ নিয়েছেন দুর্যোগ ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ মুরালি থুম্মারুকুড়ি, ওয়াল্ড মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির সাবেক অধ্যাপক ওলফ লিন্ডেন, তেল ও রাসায়নিক বিশ্লেষক বাবু পিল্লাই, পরিবেশ অর্থনীতিবিদ শান্তাকুমার এবং উপকূলীয় পরিচ্ছন্নতা বিশেষজ্ঞ মাইক কোভিং। রাজ্যের মুখ্যসচিব, দুর্যোগ ও পরিবেশ সচিব এবং সংশ্লিষ্ট জেলার কালেক্টররা এই বৈঠকে অংশ নেন।
সমুদ্র ও উপকূলজুড়ে সাফাই অভিযান:
ডুবন্ত জাহাজের তেলের দূষণ নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা হয়েছে তেল শোষণকারী বিশেষ যন্ত্রপাতি, যা নদীর মোহনা ও সৈকতের সংবেদনশীল স্থানে স্থাপন করা হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে স্বেচ্ছাসেবকদের দল তৈরি করে প্রতি ১০০ মিটার অন্তর তাদের মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে ড্রোনের সাহায্যে শনাক্ত করে প্লাস্টিক কণাগুলো (নর্ডলস) সংগ্রহ করা যায়। কাজের তত্ত্বাবধানে রয়েছে পুলিশ, দমকল ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড।
মৎস্যজীবীদের জীবন ও জীবিকা হুমকিতে:
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জাহাজডুবি কেন্দ্রস্থল থেকে ২০ নটিক্যাল মাইল এলাকায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে হাজার হাজার উপকূলীয় মৎস্যজীবীর জীবিকা সংকটে পড়েছে। সরকার স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে উপদেশ জারি করেছে—ভেসে আসা ধাতব কন্টেইনার কিংবা অজ্ঞাত পদার্থ দেখলে তা থেকে দূরে থাকার জন্য।
আইনগত পদক্ষেপ ও ক্ষতিপূরণ দাবি:
এমএসসি এলসা-৩ -এর মালিক প্রতিষ্ঠান এমএসসি গ্রুপের বিরুদ্ধে তেল দূষণের ক্ষতিপূরণ দাবিতে প্রাথমিক আইনি নোটিশ জারি করেছে ভারতের মেরিটাইম বিভাগ। পরিবেশগত পুনর্বাসন, কনটেইনার উদ্ধার ও তেল অপসারণের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা টি এন্ড টি সালভেজকে।
দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি ও পরিবেশ সচেতনতার ডাক:
কেরালার এই উপকূল এলাকা ভারতের অন্যতম জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ অঞ্চল। সেখানে রয়েছে সমুদ্রকচ্ছপ, ডলফিন ও বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের প্রজননভূমি। তেল ও প্লাস্টিকের মিশ্র দূষণে এই বাস্তুতন্ত্র মারাত্মক হুমকির মুখে। রাজ্য সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল বাস্তবায়নে কাজ করছে।
এই জাহাজডুবি শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি উপকূলরক্ষায় আন্তর্জাতিক মানের সমন্বিত পরিবেশ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার তাগিদও দিয়ে যাচ্ছে।
✅ প্রতিবেদনটি উপকূল ও পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
📲 তাই এখনই প্রতিবেদনটি শেয়ার করুন আপনার ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে—
যাতে আরও বেশি মানুষ সচেতন হন এই ভয়াবহ তেল দূষণ ও সামুদ্রিক বিপর্যয় সম্পর্কে।










