আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অস্ট্রিয়ার গ্রাজ শহরের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এক সাবেক ছাত্রের গুলিবর্ষণে অন্তত নয়জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী ও স্কুল কর্মচারী রয়েছেন। দেশটির ইতিহাসে এটিকে ‘সবচেয়ে ভয়াবহ স্কুল হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে।
হামলাকারী ২১ বছর বয়সী ওই যুবক নিজেই ওই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন। তবে তিনি কখনো স্নাতক সম্পন্ন করতে পারেননি। হামলার পর তিনি বিদ্যালয়ের শৌচাগারে নিজেকে গুলি করে আত্মহত্যা করেন।
অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর ক্রিস্টিয়ান স্টকার একে দেশের জন্য ‘অন্ধকার দিন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার ভ্যান ডার বেলেন বলেছেন, “এই বিভীষিকাকে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। নিহতদের মধ্যে এমন শিক্ষার্থীরা ছিলেন, যাদের সামনে ছিল পুরো জীবন।”
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ১০টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টা) গ্রাজের ঐতিহাসিক কেন্দ্র থেকে আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থিত BORG Dreierschützengasse বিদ্যালয়ে এই হামলা ঘটে। গুলির শব্দ ও আর্তনাদ শোনা গেলে সঙ্গে সঙ্গে অ্যালার্ম বেজে ওঠে।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ছয়জন নারী এবং চারজন পুরুষ রয়েছেন, তবে তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। গুরুতর আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১২ জন।
হামলাকারী একটি শটগান ও একটি হ্যান্ডগান ব্যবহার করে গুলিবর্ষণ করেন, যেগুলো তার নামে বৈধভাবে নিবন্ধিত ছিল। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, হামলাকারী বিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় সহপাঠীদের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছিলেন।
হামলার খবর পেয়ে পুলিশের বিশেষ ইউনিট ‘কোবরা’, চিকিৎসাকর্মী ও হেলিকপ্টার নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং ঘটনাটিকে ‘গণ হতাহতের ঘটনা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
হামলার পরপরই বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে অবস্থান নেওয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়। দুপুর নাগাদ পুলিশ নিশ্চিত করে যে, পুরো বিদ্যালয় এলাকা নিরাপদ এবং আর কোনো ঝুঁকি নেই।
এই ঘটনায় ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লায়েন বলেন, “বিদ্যালয় তরুণ প্রজন্মের প্রতীক, সেখানে মৃত্যু ও সহিংসতা আমাদের জন্য অসহনীয়।”
অস্ট্রিয়ায় বন্দুকের বৈধ মালিকের সংখ্যা ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি, কিন্তু দেশটিতে এমন স্কুল-হামলা অত্যন্ত বিরল। ২০০০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দেশটিতে মাত্র দুটি বড় ধরনের গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে এবং বিদ্যালয়গুলোকে ‘শান্তির স্থান’ হিসেবে রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন চ্যান্সেলর স্টকার।