বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নামে-বেনামে আরও পাঁচ দেশে বিপুল সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সর্বশেষ অনুসন্ধানে ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও ক্যাম্বোডিয়ায় তার সম্পদ অর্জনের প্রমাণ মিলেছে। এর আগে যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই ও সিঙ্গাপুরে অন্তত ৫৮২টি বাড়ি ও ফ্ল্যাটের তথ্য উদঘাটন করেছিল টাস্কফোর্স।
নাটকীয় অভিযান
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে এক অভিযানে দুদক কর্মকর্তারা বিপুল পরিমাণ নথি উদ্ধার করেন। সাবেক ভূমিমন্ত্রীর স্ত্রী এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রুকমীলা জামানের ড্রাইভার মো. ইলিয়াস তালুকদারের বাসা থেকে দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ সংক্রান্ত ২৩ বস্তা রেকর্ডপত্র জব্দ করা হয়। ওই নথিপত্র ঘেঁটে নতুন পাঁচ দেশে সম্পদের তথ্য উঠে আসে।
দুদকের নিশ্চিতকরণ
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে দুদকের জনসংযোগ শাখার উপ-পরিচালক মো. আক্তারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “টাস্কফোর্সের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। উদ্ধার হওয়া নথিপত্র বিশ্লেষণ করে আরও বিস্তৃত তথ্য প্রকাশ করা হবে।”
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। সরকারি দায়িত্বে থেকে বিপুল সম্পদ বিদেশে পাচার করার অভিযোগে বিরোধী দলগুলো সমালোচনার তীর ছুড়ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধারণ মানুষও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছে। তাদের মতে, রাষ্ট্রীয় পদে থেকে যারা বিদেশে অবৈধ সম্পদ গড়ে তোলেন, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
পটভূমি ও প্রশ্ন
বাংলাদেশে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে বিদেশে সম্পদ পাচারের অভিযোগ নতুন নয়। তবে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ক্ষেত্রে যেভাবে একের পর এক দেশে তার সম্পদের প্রমাণ মিলছে, তা নজিরবিহীন। ইতোমধ্যে লন্ডন, দুবাই ও সিঙ্গাপুরের মতো শহরে তার বিপুল সম্পদের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। এবার এশিয়ার আরও পাঁচ দেশে নতুন সম্পদের সন্ধান তদন্তকে আরও জটিল করে তুলেছে।
সম্ভাব্য পরিণতি
দুদক সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত পাওয়া প্রমাণের ভিত্তিতে সাইফুজ্জামানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের হতে পারে। আন্তর্জাতিক মানি লন্ডারিং চুক্তি অনুসারে বিদেশি সরকারের সহায়তায় সম্পদ পুনরুদ্ধারের পদক্ষেপও নেওয়া যেতে পারে। তবে রাজনৈতিক প্রভাব ও আন্তর্জাতিক আইনি জটিলতার কারণে এই প্রক্রিয়া দীর্ঘ হতে পারে।
উপসংহার
দেশের সাধারণ মানুষের কাছে প্রশ্ন রয়ে গেছে—রাষ্ট্রীয় পদে থেকে যদি কেউ অগণিত সম্পদ বিদেশে সরিয়ে রাখতে পারে, তবে তা রোধে বিদ্যমান ব্যবস্থাপনা কতটা কার্যকর? দুদকের চলমান তদন্ত কি কেবল কাগুজে প্রমাণেই সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি প্রকৃতপক্ষে অবৈধ সম্পদ ফেরত এনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে—এখন সবার চোখ সেদিকেই।