বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক:পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে, ভারত কর্তৃক পাঠানো ইসরায়েলি প্রযুক্তির ২৫টি হারোপ ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে গুলি করে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, গত রাত থেকে আজ পর্যন্ত এসব ড্রোন পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘনের চেষ্টা করে।
আইএসপিআর-এর বিবৃতিতে বলা হয়, “পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী তাদের প্রযুক্তিগত ও অস্ত্র ব্যবহারের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ২৫টি ইসরায়েলি হারোপ ড্রোন ধ্বংস করেছে।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “ভারত বর্তমানে আতঙ্কিত, কারণ পাকিস্তানের প্রতিরোধমূলক পাল্টা হামলায় তাদের পাঁচটি আধুনিক যুদ্ধবিমান, একাধিক ড্রোন এবং বেশ কিছু সৈন্য নিহত হয়েছে।”
পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা সূত্র জানিয়েছে, ধ্বংস হওয়া ড্রোনগুলো ছিল ইসরায়েলি প্রযুক্তির হারোপ এমকে-২ মডেলের, যা উচ্চমাত্রায় নজরদারি এবং হামলা চালাতে সক্ষম। এই ড্রোনগুলো প্রায় ৩৫,০০০ ফুট উচ্চতায় উড়তে পারে যা সাধারণ অ্যান্টি এয়ারক্রাফট বন্দুকের নাগালের বাইরে।
ড্রোনের ইঞ্জিনটি উদ্ধার করা হয়েছে এবং তাতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক UAV Engines Ltd-এর নির্মাতা চিহ্নও পাওয়া গেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এটি হচ্ছে এই ড্রোন মডেলের বিশ্বের প্রথম সফল ভূপাতনের ঘটনা।
‘হারোপ’: ভয়ঙ্কর ভ্রাম্যমাণ বিস্ফোরক ড্রোন
ইসরায়েলের তৈরি ‘হারোপ’ ড্রোন হচ্ছে একটি আধুনিক ‘লোইটারিং মিউনিশন’ ব্যবস্থা, যা শত্রুপক্ষের রাডার, বিমান প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত স্থাপনাগুলিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করে ধ্বংস করতে সক্ষম। এটি একটি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের সংমিশ্রণ; উভয় বৈশিষ্ট্যই এতে বিদ্যমান।
মেহরান ইউনিভার্সিটির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. ফাহাদ ইরফান সিদ্দিকী জানান, “এই ধরণের সামরিক ড্রোন সাধারণ ড্রোনের মতো জ্যামিং করে থামানো যায় না। এরা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। ফলে অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তি ছাড়া এগুলিকে রোধ করা কঠিন।”
তিনি আরও বলেন, “আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ২৫০ গ্রাম বা তার বেশি ওজনের ড্রোন চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের সিভিল এভিয়েশন অথরিটির অনুমতি প্রয়োজন। এই ধরণের ড্রোনগুলোর জন্য পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় ‘নো-ফ্লাই জোন’ নির্ধারিত থাকে, বিশেষ করে সীমান্ত, সামরিক ঘাঁটি ও বিমানবন্দরের আশেপাশে।”
আন্তর্জাতিক বাজারে ‘হারোপ’ ও এর বিতর্কিত ব্যবহার
TRT Global-এর তথ্য অনুযায়ী, ভারত গত এক দশকে ইসরায়েল থেকে প্রায় ২.৯ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম কিনেছে, যার মধ্যে রয়েছে রাডার, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র। হারোপ ড্রোন এর অন্যতম অংশ।
২০১৬ ও ২০২০ সালে আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার নাগোর্নো-কারাবাখ যুদ্ধে এই ড্রোন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। একটি হামলায় একটি সামরিক বাস লক্ষ্য করে আঘাত হানে হারোপ, যাতে বেশ কয়েকজন সেনা নিহত হন।
সিরিয়ায়ও এই ড্রোন ব্যবহারের নজির রয়েছে। ২০১৮ সালে সিরিয়ার একটি SA-22 বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস এবং ২০২৪ সালের ডিসেম্বরেও সিরিয়ায় একটি বড় হামলায় এই ড্রোন ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। এমনকি ২০০৫ সালেই তুরস্ক এই প্রযুক্তি হাতে পেয়েছিল বলে কিছু তথ্যসূত্রে জানা গেছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, লাহোর, চকওয়াল, বাহাওয়ালপুর, অ্যাটক, রাওয়ালপিন্ডি, গুজরানওয়ালা, চোর, মিয়ানো এবং করাচির উপকণ্ঠে এই ড্রোন অনুপ্রবেশ ঘটে। এদের মধ্যে একটি ড্রোন লাহোরে সেনাবাহিনীর একটি স্থাপনায় আঘাত করে, যাতে চার সেনা সদস্য আহত হন এবং কিছু সামরিক সরঞ্জামে আংশিক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
আইএসপিআর ডিজি আরও জানান, সিন্ধুর মিয়ানো এলাকায় একটি ড্রোন হামলায় একজন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। তবে সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য নিরাপত্তা ইউনিটের সমন্বয়ে অধিকাংশ ড্রোন-আক্রমণ নিপুণতার সঙ্গে প্রতিহত করা হয়েছে।
“পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী সব ধরনের আগ্রাসন ও উগ্রতার মোকাবিলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত। যারা এই ধরনের আগ্রাসী আচরণ প্রদর্শন করে, তাদের উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার জন্য আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং সক্ষম,” বলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ।
তিনি বলেন, ভারত পরিকল্পিতভাবে মসজিদ ও বেসামরিক স্থাপনা টার্গেট করছে, যা আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবিক নীতিমালার লঙ্ঘন। ভারতের এমন আচরণ শুধু আঞ্চলিক নয়, বিশ্বশান্তির জন্যও হুমকি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল শরীফ আরও দাবি করেন, অতীতে পাকিস্তান বাহিনী ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান গুলি করে নামিয়েছে এবং নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতেরও “মানবিক ও সামগ্রীগত ব্যাপক ক্ষতি” হয়েছে।
এই ক্রমাগত আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ফের সিয়ালকোট ও লাহোরের আকাশসীমা সাময়িকভাবে বেসামরিক ফ্লাইটের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। বুধবার রাতে প্রকাশিত ‘নোটিস টু এয়ারম্যান’ এ সাতটি প্রধান আকাশপথ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। বর্তমান সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।