বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া:কুষ্টিয়া সদর উপজেলার খাজানগর উত্তরপাড়ায় শনিবার রাতে ঘটে গেছে এক ভিন্নধর্মী ঘটনা। ভালোবাসার টানে চীন থেকে বাংলাদেশে এসে বিয়ে করেছেন শি জিং ইউ (২৮) নামের এক যুবক। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর তার নতুন নাম রাখা হয়েছে সোহান আহাম্মেদ। তিনি বিয়ে করেছেন স্থানীয় কলেজছাত্রী বৃষ্টি খাতুনকে (২১)।
বৃষ্টি কুষ্টিয়ার খাজানগর উত্তরপাড়ার মোতালেব মিস্ত্রির মেয়ে এবং একটি কলেজের সম্মান প্রথম বর্ষের ছাত্রী। পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ মাস আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বৃষ্টি ও শি জিং ইউয়ের পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে, আর সেই প্রেমই শেষ পর্যন্ত বিয়েতে রূপ নেয়।
গত শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান শি জিং ইউ। পরদিন সকালে পৌঁছে যান কুষ্টিয়ার খাজানগরে প্রেমিকার বাড়িতে। ওই দিনই আইনগত প্রক্রিয়া শেষে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলিম রীতিতে বিয়ে সম্পন্ন করেন তারা।
শি জিং ইউ চীনের হেনান অঞ্চলের বাসিন্দা। তার বাবা শি লিং জাং একজন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী, মা জুয়ে চুন সুই গৃহিণী। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। এক ভাই সেনাবাহিনীতে কর্মরত বলে জানা গেছে।
সোমবার দুপুরে খাজানগর উত্তরপাড়ায় মোতালেব মিস্ত্রির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় উৎসবমুখর পরিবেশ। কৌতূহলী স্থানীয়রা ভিড় করেছেন বিদেশি জামাইকে এক নজর দেখার জন্য। বাড়ির উঠোনে বসে হাসি-আনন্দে সময় কাটাচ্ছেন বৃষ্টি ও সোহান আহাম্মেদ।
বৃষ্টি বলেন, “ফেসবুকে পরিচয়ের পর আমাদের মধ্যে নিয়মিত কথাবার্তা চলতে থাকে। ভাষাগত সমস্যার কারণে ট্রান্সলেটর অ্যাপ ব্যবহার করতাম। তার পরিবারের সঙ্গেও আমি ভিডিও কলে কথা বলেছি। পরিবার রাজি থাকায় আমরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন আমি খুব খুশি।”
সোহান আহাম্মেদও জানান, তিনি স্ত্রীকে নিয়ে আবার চীনেও যেতে চান। “আমার পরিবার বৃষ্টিকে গ্রহণ করেছে। ভবিষ্যতে তাকে চীন নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে,” বলেন তিনি।
বৃষ্টির বাবা মোতালেব মিস্ত্রি জানান, জামাইয়ের বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নিয়েছেন। “ওদের পরিবার স্বচ্ছল। বাবা ব্যবসা করেন, ভাই সেনাবাহিনীতে চাকরি করে। ছেলের চরিত্রও ভালো মনে হয়েছে। তাই আমি রাজি হয়েছি,” বলেন তিনি।
স্থানীয় এক প্রতিবেশী আনোয়ার হোসেন বলেন, “এলাকায় এরকম ঘটনা আগে শোনা যায়নি। বিদেশি জামাই দেখতে সবাই ভিড় করছে। তবে বৃষ্টিকে আমরা ছোটবেলা থেকে চিনি, মেয়েটা শান্ত-ভদ্র। ওর সুখেই আমরা খুশি।”
আরেক প্রতিবেশী শামীমা খাতুনের মন্তব্য, “বৃষ্টি যেভাবে সাহস নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা বিরল। বিদেশ থেকে এসে কেউ ধর্ম পরিবর্তন করে বিয়ে করে—এমন ঘটনা সত্যিই চমকপ্রদ।”
গ্রামে এখনো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এই ভিন্নধর্মী বিয়ে। কুষ্টিয়ার খাজানগরের মানুষজনের কাছে বিদেশি জামাই যেন এক নতুন কৌতূহল হয়ে উঠেছেন।