Home First Lead ৭ মাত্রার ভূমিকম্প ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

৭ মাত্রার ভূমিকম্প ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

ছবি: এআই

ব্যাপক ধ্বংস, প্রাণহানি ও দীর্ঘমেয়াদি অচলাবস্থার আশঙ্কা

 আমিরুল মোমেনিন, ঢাকা: বাংলাদেশে মাঝারি মাত্রার ধারাবাহিক ভূমিকম্প ও সক্রিয় ফল্ট লাইনের ক্রমাগত চাপ দেশের জন্য বড় ধরনের ভূমিকম্পের সতর্ক সংকেত বলে মনে করছেন ভূতাত্ত্বিকরা। তাঁদের ভাষ্য, যদি দেশের উত্তর-পূর্ব বা উত্তরা-পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান ফল্ট লাইনে ম্যাগনিচিউড ৭ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হয়, তবে তা দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

ভবন ধসে বড় ধরনের প্রাণহানির শঙ্কা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অধিকাংশ বড় শহর—বিশেষ করে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে—জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণের কারণে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ভয়াবহ হতে পারে। রেট্রোফিট না করা পুরনো ভবন, অননুমোদিত নির্মাণ ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের কারণে বিপুল সংখ্যক ভবন ধসে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
ঢাকার ক্ষেত্রে ম্যাগনিচিউড ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে কয়েক হাজার ভবন সম্পূর্ণ ধসে যেতে পারে বলে ধারনা বিশেষজ্ঞদের। ফলে মৃত্যুর সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়ানোর ঝুঁকি উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

দমকল, হাসপাতাল ও রেসকিউ কার্যক্রমে দীর্ঘ অচলাবস্থা
ধসেপড়া ভবনের নিচে আটকা পড়া মানুষদের উদ্ধারে সময়ই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দুর্বল অবকাঠামো, সংকীর্ণ রাস্তা এবং যানজটের কারণে উদ্ধারকাজ দ্রুত করা সম্ভব নাও হতে পারে। অনেক হাসপাতালও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, ফলে জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থাও ব্যাহত হবে।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে বন্দর কার্যক্রম ব্যাহত হলে দেশের আমদানি-রপ্তানি ও অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

গ্যাসলাইন, বিদ্যুৎ ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা
ভূমিকম্পে গ্যাসলাইন ফেটে আগুন লাগা, বিদ্যুতের ট্রান্সমিশন ভেঙে ব্যাপক বিভ্রাট, সড়ক ধসে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। বড় ধরনের একটি দুর্যোগ ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত দেশের গুরুত্বপূর্ণ সেবা ব্যবস্থা প্রায় অচল করে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভূতাত্ত্বিকদের সতর্কবার্তা
ভূকম্পবিদদের মতে, বাংলাদেশের পূর্বাংশের ইন্দো-বর্মা সাবডাকশন জোন দীর্ঘদিন ধরে শক্তি সঞ্চয় করে রেখেছে। প্রতি ৫০–১০০ বছরে বড় ধরনের একটি ভূমিকম্প হওয়া প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রবণতা। সাম্প্রতিক মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পগুলো বড় ধরনের ঘটনার সম্ভাব্য পূর্বাভাস হতে পারে বলেও মত তাঁদের।

প্রস্তুতির ঘাটতি এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় ভূমিকম্প ঠেকানোর কোনো উপায় নেই, কিন্তু ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য এখনই জরুরি প্রস্তুতি নিতে হবে। এসব প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছে
১. দুর্বল ভবন চিহ্নিত করে পুনর্গঠন বা রেট্রোফিট করা
২. নতুন ভবনগুলোতে কঠোর ভূমিকম্প প্রতিরোধী নকশা প্রয়োগ
৩. হাসপাতাল, দমকল ও জরুরি সেবা সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি
৪. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে ভূমিকম্প মহড়া বাধ্যতামূলক করা
৫. গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইনে সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার
৬. উদ্ধার বাহিনীর জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি
৭. মানুষকে সচেতন করতে বড় পরিসরে প্রচারাভিযান চালানো

সরকারের করণীয়
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, ভূমিকম্প প্রস্তুতি উন্নত করতে নতুন নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। তবে বাস্তবায়ন ও নজরদারি জোরদার ছাড়া বড় দুর্যোগ ঠেকানো কঠিন হবে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বহুতল ভবনের জরুরি নিরাপত্তা মূল্যায়ন দ্রুত সম্পন্ন করা জরুরি বলে মত দিচ্ছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

বাংলাদেশে বড় একটি ভূমিকম্প “হবে কি না” তা নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই—বিশেষজ্ঞরা মনে করেন প্রশ্নটি এখন “কবে হবে” তাতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সময় থাকতে প্রস্তুতি নেওয়াই ক্ষয়ক্ষতি কমানোর একমাত্র উপায়।