বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি যতটা জরুরি, রোগব্যাধি নিয়ন্ত্রণ ততটাই চ্যালেঞ্জিং। বিশেষজ্ঞদের মতে, খামার পর্যায়ে রোগপ্রতিরোধক ব্যবস্থার দুর্বলতা, ভ্যাকসিন সরবরাহের অনিয়ম এবং দ্রুত রোগ শনাক্তের অপর্যাপ্ত সক্ষমতা এই খাতের উন্নয়নকে সবচেয়ে বেশি বাধাগ্রস্ত করছে।
গবাদিপশুর মধ্যে এলএসডি, এফএমডি ও বিবিএস এখনও উদ্বেগের প্রধান কারণ। ছাগলে পিপিআরএবং পোলট্রিতে নিউক্যাসল ও অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা খামারিদের অর্থনৈতিক ক্ষতির বড় উৎস। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৌসুমি রোগব্যাধি নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে খামারি রোগ শনাক্ত হওয়ার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেন না, যার ফলে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা তাদের আঞ্চলিক মূল্যায়নে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশে প্রাণিস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় রিয়েল-টাইম রোগমনিটরিং ব্যবস্থা এখনও জোরদার পর্যায়ে পৌঁছায়নি। ফলে রোগ দেখা দিলে প্রথম সারির প্রতিক্রিয়া তুলনামূলক ধীর হয়, যা খামারের ক্ষতি বাড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন ফর অ্যানিমেল হেলথ -এর একটি বিশ্লেষণে বলা হয়, অঞ্চলভিত্তিক রোগ শনাক্তকরণ, ল্যাব সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অবৈধ বা নিম্নমানের ভেটেরিনারি ওষুধ নিয়ন্ত্রণ—এগুলো উন্নত না হলে রোগব্যাধি নিয়ন্ত্রণ দীর্ঘমেয়াদে কঠিন হবে।
দেশের খামারিরা বলছেন, অনেক সময় ভ্যাকসিন পাওয়া গেলেও কার্যকর ব্যবস্থাপনা না থাকায় সঠিক সময়ে তা প্রয়োগ করা যায় না। গ্রামাঞ্চলে ভেটেরিনারি সেবা সীমিত থাকায় তারা অভিজ্ঞতাভিত্তিক চিকিৎসার ওপর নির্ভর করেন, যা অনেক ক্ষেত্রে প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়ায়। প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞদের মতে, খামারে বায়োসিকিউরিটি ব্যবস্থা জোরদার, খাঁচা ও পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা, নতুন পশু আনার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং নিয়মিত ভ্যাকসিন সময়সূচি অনুসরণ—এসব হলেও সংক্রমণ অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
ডিজিটাল প্রযুক্তি এই খাতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। মাঠপর্যায়ে মোবাইল অ্যাপভিত্তিক রোগ সতর্কতা, অনলাইন ভেট কনসালটেশন, ইউনিয়ন পর্যায়ে হটস্পট ম্যাপিং এবং খামারের রোগ ইতিহাস রেকর্ডিং ব্যবস্থা চালু হলে রোগ প্রাদুর্ভাব আগেই শনাক্ত করা যাবে। FAO ও DLS যৌথভাবে পরিচালিত কয়েকটি পাইলট প্রোগ্রামে দেখা গেছে, এ ধরনের ডিজিটাল সেবা খামারিদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে উল্লেখযোগ্য সহায়তা দিয়েছে।
প্রাণিসম্পদ খাতের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় রোগব্যাধি নিয়ন্ত্রণ এখন জাতীয় অগ্রাধিকারের বিষয়। উৎপাদন বৃদ্ধি, খামারিদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক রোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা ছাড়া সামনে এগোনোর কোনো পথ নেই।










