সম্পাদকীয়:
কানাডার সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচন একদিকে যেমন পরিচিত রাজনৈতিক দলগুলোর পুনরুত্থানের সাক্ষ্য দিয়েছে, অন্যদিকে নেতৃত্বে পরিবর্তন এনে দেশের ভবিষ্যৎ গতিপথ নতুনভাবে নির্ধারণের ইঙ্গিতও দিয়েছে। জাস্টিন ট্রুডোর প্রায় এক দশকের শাসনের পর, অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকার মার্ক কার্নির নেতৃত্বে লিবারেল পার্টির ফের ক্ষমতায় আসা রাজনীতিতে কৌশলগত ভারসাম্য ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির প্রয়োজনীয়তার বার্তা দিচ্ছে।
জাস্টিন ট্রুডো নিজেই রাজনীতির পোস্টার-বয় ছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়, বিশেষত অর্থনৈতিক বৈষম্য, আবাসন সংকট এবং বিদেশনীতি নিয়ে অসন্তোষের কারণে। এমন প্রেক্ষাপটে লিবারেল পার্টির জন্য নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজন ছিল—এবং সেখানে এসে দাঁড়ালেন মার্ক কার্নি, একজন নীতিবান, কথাবার্তায় পরিমিত এবং আন্তর্জাতিক অর্থনীতি সম্পর্কে গভীর অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি।
কার্নি রাজনীতিতে নবাগত হলেও, তাঁর পেশাদার ক্যারিয়ার তাঁকে বিশ্বাসযোগ্যতা দিয়েছে—বিশেষ করে এক চরম বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে।
ভোটে লিবারেলদের জয়, কিন্তু একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন
লিবারেল পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেলেও এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে বিরোধী দলগুলোর বিপর্যয় বিশেষ করে এনডিপি-র দুর্বল ফলাফলের ফলে কার্নির জন্য সরকার গঠন অপেক্ষাকৃত সহজ হতে পারে। এনডিপি প্রধান জগমিত সিংয়ের পদত্যাগ এই প্রক্রিয়াকে আরও মসৃণ করে দিতে পারে।
কার্নির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরু থেকেই কানাডার পণ্যে শুল্ক আরোপ, ভূমি ও সম্পদের উপর দাবি তোলা এবং আঞ্চলিক রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি কানাডার জন্য উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
এই প্রেক্ষিতে কার্নির বক্তব্য—”আমাদের দেশ বিক্রি হয়ে যাবে না, আমরাও মাথা নোয়াব না”—জনগণের মাঝে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়েছে। তবে বক্তৃতা আর বাস্তব সিদ্ধান্তে ফারাক থাকে, তা সামনের সময়েই বোঝা যাবে।
এই নির্বাচনের ফলাফল এটাই বলে—জনগণ আর আবেগী বক্তৃতা চায় না, চায় কার্যকর সিদ্ধান্ত ও বাস্তববাদী নেতৃত্ব। কার্নির পলিসি-নির্ভর নেতৃত্ব, অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তি লিবারেলদের নতুনভাবে সংগঠিত করেছে।
মার্ক কার্নি এখন শুধু একজন প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি কানাডার রাজনৈতিক সংস্কার ও আন্তর্জাতিক অবস্থান পুনর্গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নতুন মুখ। তিনি যদি রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে যেতে পারেন এবং দেশের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ দক্ষতায় মোকাবিলা করেন—তবে হয়তো সত্যিই কানাডার জন্য এক “কার্নি যুগ” শুরু হয়েছে।