এমরান মাহমুদ প্রত্যয়, নওগাঁ: ইউটিউব দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে মাশরুম চাষ শুরু করেছিলেন শাহাজাদী। মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করা সেই উদ্যোগ এখন তাঁকে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ৩ নম্বর আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সিংসাড়া গ্রামের বাসিন্দা তিনি। স্বামী মো. বাবলুর রহমানের চাকরির সুবাদে দীর্ঘ সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে কাটিয়ে দুই বছর আগে গ্রামে স্থায়ী হন এই গৃহবধূ।
স্বামী একাই সংসারের ঘানি টানতেন। অবসর সময়ে ঘরে বসে না থেকে স্বামীর আয়ের সঙ্গে বাড়তি যোগান দিতে কিছু একটা করার ভাবনা ছিল শাহাজাদীর। সেই ভাবনা থেকেই ২০২৩ সালে ইউটিউব দেখে মাশরুম চাষে আগ্রহী হন তিনি।
শাহাজাদী জানান, মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে তিনি মাশরুম চাষ শুরু করেন। বর্তমানে আত্রাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতায় তাঁর ৬ ফুট বাই ৯ ফুট আয়তনের একটি মাশরুম প্রজেক্ট রয়েছে, যা প্রায় দেড় লাখ টাকার সম্পদে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে তাঁর খামারে ৪০০টি স্পন (বীজ) রয়েছে। প্রতিদিন এখান থেকে ৩-৪ কেজি মাশরুম উৎপাদিত হয়, যা তিনি ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন।
বাজারে মাশরুমের প্রচুর চাহিদা থাকলেও উৎপাদনের তুলনায় তা অপ্রতুল। সব খরচ বাদ দিয়ে বর্তমানে মাসে ৫-৭ হাজার টাকা এবং বছরে প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকা আয় করছেন শাহাজাদী। প্রাথমিক অবস্থায় লাভ কম হলেও ধীরে ধীরে আয় বাড়ায় তিনি খুশি। খামারের সব কাজ তিনি একাই সামলান।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে শাহাজাদী বলেন, ‘গ্রামে এমন কাজ অনেকে মেনে নিতে পারেননি, নানা কথা বলেছেন। কিন্তু আমি কারো কথায় কর্ণপাত না করে এগিয়ে গিয়েছি। আমি ইউটিউব দেখে এবং উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে এই চাষ শুরু করি। সরকারিভাবে বড় কোনো অনুদান বা আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ না পেলেও কৃষি অফিস আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বপ্ন একজন সফল মাশরুম চাষি হওয়া। বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে উন্নত কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে তা করার ইচ্ছা আছে। এছাড়া এলাকায় নতুন কেউ মাশরুম চাষে আগ্রহী হলে আমি তাদের হাতে-কলমে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা করি, যাতে মাশরুমের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়।’
মাশরুম চাষকে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় উল্লেখ করে আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রসেনজিৎ তালুকদার বলেন, ‘মাশরুম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজমশক্তি উন্নত করে, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এতে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল ও প্রোটিন রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আত্রাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাশরুম উদ্যোক্তা তৈরিতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা সহায়তা দিয়ে থাকে। প্রদর্শনীর আওতায় আমরা উদ্যোক্তা শাহাজাদীকে একটি চাষ ঘর, মাশরুম উৎপাদন কক্ষ এবং আনুষাঙ্গিক সহায়তা দিয়েছি। স্বল্প পুঁজিতে ভালো মুনাফা অর্জনের জন্য মাশরুম চাষের বিকল্প নেই। নতুন কোনো উদ্যোক্তা এগিয়ে এলে আমরা তাদের প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করব।’










