Home সারাদেশ রংপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তার স্ত্রীকে নৃশংসভাবে হত্যা

রংপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তার স্ত্রীকে নৃশংসভাবে হত্যা

ঘটনাস্থলে পুুলিশ। ছবি সংগৃহীত

 

রক্তে ভাসছিল রান্নাঘর ও ডাইনিং রুম

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, রংপুর: বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। দেশজুড়ে যখন বীর সন্তানদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হচ্ছে, ঠিক তখনই রংপুরের তারাগঞ্জে ঘটল এক পৈশাচিক ঘটনা। স্বাধীন দেশে নিজ ঘরেই নিরাপত্তা পেলেন না একাত্তরের বীর সেনানী। দুর্বৃত্তদের হাতে নির্মমভাবে খুন হতে হলো বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক যোগেশ চন্দ্র রায় (৭৫) এবং তার সহধর্মিণী সুর্বনা রায়কে (৬০)।

শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের খিয়ারপাড়া গ্রামে তাদের নিজ বাড়িতেই এই লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড ঘটে। রবিবার সকালে বৃদ্ধ দম্পতির গলা কাটা মরদেহ উদ্ধারের পর কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজন ও এলাকাবাসী।

নিস্তব্ধ ভোরের আর্তনাদ
প্রতিদিনের মতো শনিবার রাতেও খাবার খেয়ে ঘুমাতে গিয়েছিলেন এই দম্পতি। কিন্তু রবিবার ভোরের আলো ফুটলেও তাদের ঘরের দরজা খোলেনি। দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকির পরও কোনো সাড়া না পেয়ে প্রতিবেশী দীপক সন্দিহান হয়ে ওঠেন। পরে বাড়ির মূল গেটের সামনে মই লাগিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই তার চোখে পড়ে এক ভয়াবহ দৃশ্য।

রান্নাঘরের মেঝেতে পড়ে আছে গৃহকর্ত্রী সুর্বনা রায়ের রক্তাক্ত মরদেহ। আর ডাইনিং রুমে পড়ে আছেন একাত্তরের রণাঙ্গনের যোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায়। দুজনেরই গলা কাটা, ঘরের মেঝে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। দীপকের চিৎকারে ছুটে আসেন এলাকাবাসী, মুহূর্তেই আনন্দের সেই বাড়িটি পরিণত হয় শোকের মাতমে।

নিরাপত্তা দিতে পারল না নিজ ঘর
যোগেশ চন্দ্র রায় ছিলেন এলাকার রহিমাপুর নয়াহাট মুক্তিযোদ্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। সারাটা জীবন মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে কাটিয়েছেন। এই দম্পতির দুই ছেলে বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছেন। অথচ ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, পুলিশ কর্মকর্তার বাবা-মা তাদের গ্রামের বাড়িতেই সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় প্রাণ হারালেন। বাড়িতে তারা দুজনই থাকতেন, এই একা থাকার সুযোগটাই হয়তো নিয়েছে ঘাতকরা।

প্রশাসনের তৎপরতা
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোনাববর হোসেন এবং পুলিশ কর্মকর্তারা। তারাগঞ্জ থানার এসআই আবু ছাইয়ুম জানান, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মাথায় আঘাত করার পর তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলা কাটা হয়েছে। তবে কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড, তা এখনো অস্পষ্ট।” ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনে রংপুর গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ও পুলিশ একযোগে কাজ শুরু করেছে।

শোকে স্তব্ধ এলাকাবাসী
একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তার স্ত্রীর এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসী। স্থানীয়দের প্রশ্ন, “যিনি জীবনবাজি রেখে দেশ স্বাধীন করেছেন, বার্ধক্যে এসে তাকেই যদি এমন নির্মমভাবে চলে যেতে হয়, তবে নিরাপত্তা কোথায়?” এলাকাবাসী দ্রুততম সময়ে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত নরপিশাচদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।