আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে প্রবেশের শুরুতেই আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ডলারের অব্যাহত দুর্বলতা, ইউরোর শক্তিশালী হওয়া ও ইয়েনের মিশ্র আচরণ মুদ্রাব্যবস্থায় বড় প্রভাব ফেলছে।
মার্কিন ডলার ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স দেখিয়েছে এ বছর। ইউরোর বিপরীতে প্রথমার্ধে এর মান কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ। একই সময়ে ইয়েনের বিপরীতে প্রায় ৬ শতাংশ পতন ঘটেছে। ডলারের এই পতনের ফলে পর্যটন খরচ বেড়ে গেছে মার্কিন নাগরিকদের জন্য, আর আমদানি-নির্ভর দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমেছে।
ইউরো: রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও শক্তিশালী
ইউরোপের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছুটা কড়াকড়ি মনোভাব বজায় রেখেছে, ফলে ইউরো সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ডলারের বিপরীতে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে ইউরো-ডলার রেট ১.১৬৯০ এর ঘরে অবস্থান করছে, যা সাম্প্রতিক তিন সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড।
ইসিবি’র শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজারে ইউরোর চাহিদা বাড়ছে কারণ বিনিয়োগকারীরা ইউরোপকে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে দেখছেন, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ট্রাম্প প্রশাসনের আগ্রাসী বাণিজ্য নীতির প্রেক্ষাপটে।
ডলার: রপ্তানিকারক লাভবান, কিন্তু পর্যটক বিপদে
ডলারের দরপতনের ফলে মার্কিন পণ্য এখন আন্তর্জাতিক বাজারে তুলনামূলক সস্তা। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিকারকরা লাভবান হচ্ছেন। অন্যদিকে, বিদেশ সফররত মার্কিন নাগরিকদের খরচ বেড়ে গেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। একটি রিপোর্টে জানা গেছে, শুধু ইউরোপ ভ্রমণকারীদের প্রতিদিনের খরচ গড়ে ২০ শতাংশ বেড়ে গেছে গত বছরের তুলনায়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফেডারেল রিজার্ভ যদি সুদের হার কমায় কিংবা ট্রাম্প প্রশাসন যদি ফেডের স্বাধীনতা সীমিত করতে চায়, তাহলে ডলারের মান আরও হ্রাস পেতে পারে।
ইয়েন: সুরক্ষিত মুদ্রা হিসেবে আগ্রহ, তবে জাপানের অর্থনীতি চাপের মুখে
জাপানি ইয়েন দীর্ঘদিন ধরে সুরক্ষিত মুদ্রা হিসেবে বিবেচিত হলেও বর্তমানে এর মান ডলারের বিপরীতে স্থিতিশীল নয়। এখন পর্যন্ত ডলার-ইয়েন রেট ১৪৭.৯–এর কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে, যদিও বছরে শুরু থেকে ইয়েন কিছুটা শক্তি ফিরে পেয়েছে।
তবে জাপানে নিম্নমুখী মুদ্রাস্ফীতি ও অর্থনৈতিক জটিলতা রয়েছে, যার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনো অত্যন্ত সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী পরিণতি কী?
মুদ্রাবাজারে এই পরিবর্তনের ফলে পর্যটন, আমদানি-রপ্তানি, বিনিয়োগ সব ক্ষেত্রেই বড়সড় প্রভাব পড়ছে। ডলারের দুর্বলতা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য স্বস্তির কারণ হতে পারে, কারণ তাদের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে চাপ কিছুটা কমবে। তবে পণ্যমূল্য ও জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে তেলনির্ভর দেশগুলো অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে।
সারসংক্ষেপ:
মুদ্রা | বর্তমান মান (প্রায়) | বাজার প্রবণতা | প্রভাব |
---|---|---|---|
ইউরো | ১.১৬৯০ প্রতি ডলার | শক্তিশালী | রপ্তানিতে সুবিধা |
মার্কিন ডলার | দুর্বল | পতনশীল | পর্যটন খরচ বেড়েছে |
ইয়েন | ১৪৭.৯ প্রতি ডলার | মিশ্র | সুরক্ষিত মুদ্রার চাহিদা |