Home সারাদেশ ফেনীতে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধ ভেঙে ৫ গ্রাম প্লাবিত

ফেনীতে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধ ভেঙে ৫ গ্রাম প্লাবিত

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ফেনী: ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার পাঁচটি গ্রাম ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর অন্তত তিনটি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেলে উত্তর বরইয়া, দক্ষিণ বরইয়া, বসন্তপুর, ফতেহপুর ও জগতপুর এলাকায় হু হু করে পানি ঢুকে পড়ে। এতে শতাধিক পরিবার ঘরছাড়া হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, মৎস্য খামার ও বীজতলার বড় অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম জানান, শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার (১২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার) কাছাকাছি ১১ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল রাত ৯টার দিকে প্রবল স্রোতে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের বণিক পাড়ায় মুহুরী নদীর বাঁধের ৫০ মিটার এবং সিলোনিয়া নদীর বাঁধের একটি অংশ ভেঙে যায়।

তিনি আরও জানান, বিকেল থেকে ভারী বর্ষণ কিছুটা কমে যাওয়ায় নদীর পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম জানান, বাঁধ ভেঙে গ্রামে পানি ঢুকে বহু পুকুর ও মাছের খামার ভেসে গেছে। মাঠে ফসল না থাকলেও অনেক জমিতে আগাম জাতের বীজতলা ছিল, যা এখন পুরোপুরি তলিয়ে গেছে। ঐতিহ্যবাহী ফুলগাজী বাজারও হাঁটুসমান পানির নিচে চলে গেছে।

ব্যবসায়ী আবদুর রহমান বলেন, ‘প্রতিবছর এমন দুর্ভোগ হয়। এবারও দোকানে পানি ঢুকে গেছে, মুদি মালামালের অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে।’ তিনি জানান, বাজারের শতাধিক ব্যবসায়ী এবার ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

মধ্যরাতে মুহুরী নদীর বাঁধ ভাঙার স্থান পরিদর্শন করেন ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহরিয়া ইসলাম ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। জেলা প্রশাসক বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত মেরামতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাউবো জানিয়েছে, নদীর পানি ১০ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেই বাঁধে ফাটল ও ধসের ঝুঁকি থাকে।’

পাউবো ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তার হোসেন মজুমদার জানান, বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশটি ছিল আরসিসি ঢালাই। পানি কমে গেলে সেটি দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পাড় ঘেঁষে ১২২ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধের নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে এই অঞ্চলের মানুষের জন্য টেকসই সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।

ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মজিবুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল পরিস্থিতিকে আবারও জটিল করে তুলতে পারে।

এদিকে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দক্ষিণ বরইয়া, বিজয়পুর, ফতেহপুর, বশিখপুরসহ আশপাশের এলাকাগুলোর নিচু অংশ এখনো পানির নিচে। রান্নাবান্না বন্ধ হয়ে গেছে বহু ঘরে। অনেকে স্কুল, উঁচু রাস্তা কিংবা আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।