বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: সতর্কবার্তা সত্ত্বেও থামছে না মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তায় বা রেললাইনে হাঁটার প্রবণতা। এরই জেরে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটছে। মোবাইলে মগ্ন হয়ে মানুষ হারাচ্ছে নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ। অনেক সময় শেষ হচ্ছে মৃত্যুতে।
গত সপ্তাহেই, রাজশাহীর বাগমারায় রেললাইনে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলেন ২২ বছরের কলেজছাত্র নাঈম হোসেন। হঠাৎই পেছন থেকে ছুটে আসে একটি আন্তঃনগর ট্রেন। নাঈম ঘটনাস্থলেই মারা যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোবাইল কানে থাকায় ট্রেনের হুইসেলও তিনি শুনতে পাননি।
একই ধরনের আরেকটি ঘটনা ঘটে গাজীপুরের টঙ্গীতে। বেলা ১১টার দিকে রেলক্রসিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন পোশাককর্মী সুলতানা আক্তার। চলন্ত ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন পাশের ড্রেনে। হাসপাতালে নেয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়।
এর আগেও মোবাইলে মগ্ন থাকার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জে রেললাইনে হাঁটতে হাঁটতে ভিডিও কলে কথা বলছিলেন এক তরুণী। পাশে থাকা বন্ধু বারবার সতর্ক করলেও কাজ হয়নি। ট্রেনের ধাক্কায় তার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
শুধু রেলপথেই নয়, সড়কপথেও বাড়ছে এই ধরনের দুর্ঘটনা। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে এক সিএনজি যাত্রী মোবাইলে ব্যস্ত ছিলেন, খেয়াল ছিল না সামনে দ্রুতগতির বাস। সিএনজি দাঁড়িয়ে থাকলেও বাসটি এসে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। মোবাইল হাতে নিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান ওই যাত্রী, পরে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোবাইল ফোনে একনাগাড়ে কথা বলা বা ভিডিও দেখা মানুষের চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা নষ্ট করে দেয়। এতে তারা আশপাশের শব্দ, গতি, বিপদ ইত্যাদি বুঝে উঠতে পারেন না। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানান, প্রায় ২০ শতাংশ ট্রেন-দুর্ঘটনার পেছনে মোবাইলে ব্যস্ত থাকার ভূমিকা রয়েছে। অথচ রেললাইনের আশপাশে হাঁটা, দাঁড়ানো এমনকি ফোনে কথা বলাও আইনত দণ্ডনীয়।
পথচারীদের জন্য কিছু সাধারণ সতর্কতা:
- রেললাইন ও রাস্তা পারাপারের সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
- হেডফোন ব্যবহার করে গান শোনা বা ভিডিও দেখা বিপজ্জনক হতে পারে।
- চলন্ত যানবাহনের সামনে বা পেছনে মোবাইল ব্যবহারে দৃষ্টিশক্তি ও মনোযোগ বিভ্রান্ত হয়।
- মোবাইল ব্যবহারের সময় নিরাপদ স্থানে দাঁড়ানো নিশ্চিত করুন।
- পরিবারের শিশু ও বয়স্ক সদস্যদের এ বিষয়ে বিশেষভাবে সচেতন করুন।
প্রযুক্তি আমাদের জীবনের অংশ হলেও সচেতনতার অভাবে সেটিই হয়ে উঠতে পারে মৃত্যুর কারণ। তাই ‘একটু কথা’ বলার জন্য যেন ‘সারা জীবনের নীরবতা’ বেছে না নিতে হয় সেই সচেতনতাই এখন সবচেয়ে জরুরি।