আন্তর্জাতিক ডেস্ক: শনিবার রাতের এক অভিযানে ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় বোমাবর্ষণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ হামলার অনুমোদন দেন এবং এটিকে ‘অত্যন্ত সফল’ বলে আখ্যায়িত করেন।
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, “আমরা ফোর্দো, নাতানজ ও ইসফাহানে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় সফল হামলা সম্পন্ন করেছি। ফোর্দো কেন্দ্র ছিল প্রধান লক্ষ্যবস্তু, যেখানে সম্পূর্ণ অস্ত্রভাণ্ডার ফেলা হয়েছে। আমাদের সব বিমান ইরানের আকাশসীমা ত্যাগ করেছে এবং নিরাপদে ফিরছে।”
এই হামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতি বড় ধরনের মোড় নিল। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পাল্টাপাল্টিতে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। ইসরায়েল গত শুক্রবার রাতে ইরানে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়ে আইআরজিসি’র তিন জ্যেষ্ঠ কমান্ডারকে হত্যা করে।
এর আগে মার্কিন সেনাবাহিনী মিসৌরির হোয়াইটম্যান ঘাঁটি থেকে চারটি বি-টু স্টেলথ বোমারু বিমান গুয়ামের ঘাঁটিতে সরিয়ে নেয়। এই যুদ্ধবিমানগুলো ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের “ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনেট্রেটর” বহনে সক্ষম, যা পারমাণবিক স্থাপনার মতো গভীর ভূগর্ভস্থ লক্ষ্যবস্তুতে হামলার জন্য তৈরি।
ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রটি পাহাড়ের ৩০০ ফুট নিচে নির্মিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কেন্দ্র ধ্বংসে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বাঙ্কার-ব্রেকার বোমা ব্যবহার করা হতে পারে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তাদের সর্বশেষ অভিযানে ইরানের সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দেশটির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র লাঞ্চারের অর্ধেকেরও বেশি ধ্বংস করা হয়েছে।
তবে তেহরান পাল্টা জবাব দিয়েছে। ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের বিভিন্ন কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুর দিকে আত্মঘাতী ড্রোন পাঠিয়েছে।
এদিকে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জানান, ইউরোপ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করছে। তিনি বলেন, “ইরান যেন কখনও পারমাণবিক অস্ত্র না পায়—এটা নিশ্চিত করতে আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাব।”
কিন্তু ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেন, “আমরা শুনছি যুক্তরাষ্ট্র এই আগ্রাসনে সরাসরি যুক্ত হতে পারে। সেটা হলে তা হবে সবার জন্য ভয়াবহ এবং বিপজ্জনক।”
বর্তমানে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা গেছে এবং সম্ভাব্য মৃত্যুর ক্ষেত্রে নেতৃত্বের উত্তরসূরি হিসেবে তিনজন জ্যেষ্ঠ ধর্মগুরুকে মনোনীত করেছেন।
মধ্যপ্রাচ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই সংঘাত আগামী দিনে বিশ্বরাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।