আন্তর্জাতিক ডেস্ক: করাচির লিয়ারিতে এক হৃদয়বিদারক ঘটনার অবসান ঘটেছে। ১৯ বছর বয়সি এক নববধূ স্বামীর কথিত যৌন সহিংসতার শিকার হয়ে কোমায় চলে যাওয়ার পর বুধবার সকালে করাচির সিভিল হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে মারা গেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, জুনের ১৫ তারিখে বিয়ে হয় তরুণীর। তবে বিয়ের মাত্র দুই দিন পরই তিনি স্বামীর হাতে ‘নৃশংস যৌন নির্যাতনের’ শিকার হন। স্বামী তাকে অমানবিক কায়দায় ধর্ষণ করেন এবং ধাতব পাইপ দিয়ে যৌনাঙ্গে আঘাত করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভিকটিমের ভাইয়ের দায়ের করা এফআইআরে বলা হয়েছে, নির্যাতনের কারণে তার বোনের শরীর থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয় এবং পরিস্থিতি গুরুতর হওয়ায় তাকে প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে তাকে সিভিল হাসপাতালের শহীদ মোয়তরমা বেনজির ভুট্টো ট্রমা সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়।
পুলিশ সার্জন ডা. সুমাইয়া সায়েদ জানান, ভিকটিম কোমায় ছিলেন এবং তার শারীরিক পরীক্ষায় যৌন নির্যাতনের সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, “ভুক্তভোগী তরুণী বুধবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে ট্রমা সেন্টারে মারা যান। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল এবং তার শরীরে অস্ত্রোপচারের চিহ্ন ছিল।”
বাগদাদি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজিদ আলভি ভিকটিমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, অভিযুক্ত স্বামীর বিরুদ্ধে এর আগে পাকিস্তান দণ্ডবিধির ৩২৪ (হত্যাচেষ্টার শাস্তি) ও ৩৭৬-বি (ধর্ষণের শাস্তি) ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ৩০ জুন ভিকটিম অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের সদস্যরা তাকে নিজেদের বাসায় নিয়ে আসে। এরপর ১৭ জুলাই সে জানায়, স্বামী তার সঙ্গে ‘অপ্রাকৃতিক যৌন আচরণ’ করেছে এবং একটি বিদেশি বস্তু ব্যবহার করে তাকে যৌন নিপীড়নের শিকার করেছে। ঘটনা গোপন রাখার জন্য ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছিল অভিযুক্ত।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানে ধর্ষণবিরোধী কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি উদ্বেগজনকভাবে বেড়েই চলেছে। চলতি বছরের মে মাসে উত্তর করাচিতে একই পরিবারের দুই বোনের ওপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এপ্রিলে গুজরানওয়ালায় এক বিরল রায়ে আদালত এক ব্যক্তিকে তার স্ত্রীকে অপ্রাকৃতিক যৌন আচরণের জন্য ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে আইনি কাঠামো থাকলেও সামাজিক লজ্জা, অভিযোগ দায়েরের ঝুঁকি এবং তদন্ত প্রক্রিয়ায় দুর্বলতা এসব অপরাধের প্রতিকারকে বাধাগ্রস্ত করছে।