Home Third Lead যৌন হয়রানির অভিযোগে উত্তাল চান্দিনা: দুই প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি

যৌন হয়রানির অভিযোগে উত্তাল চান্দিনা: দুই প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কুমিল্লা: চান্দিনায় পৃথক দু’টি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ওই দুই প্রধান শিক্ষকের অপসারণ ও পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে শত শত শিক্ষার্থী। তারা বিক্ষোভ মিছিল, মহাসড়ক অবরোধ এবং উপজেলা ও থানা কমপ্লেক্স ঘেরাও করে দিনভর প্রতিবাদ জানিয়েছে। এ ঘটনায় পুরো উপজেলায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।

গতকাল দুপুর থেকে চান্দিনার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। ডা. ফিরোজা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাদিকুল ইসলাম কিরণ এবং মহিচাইল জোবেদা মমতাজ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে একযোগে ফুঁসে ওঠে তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভের এক পর্যায়ে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ছাত্রীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা উপজেলা গেট এলাকায় অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। এতে মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় চার কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়, যা চরম জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আশরাফুল হক, চান্দিনা ও দাউদকান্দি সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তানভীর ফয়সাল এবং চান্দিনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাবেদ উল ইসলামসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও প্রধান শিক্ষকদের আত্মপক্ষ সমর্থন

ডা. ফিরোজা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ৮ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, “প্রধান শিক্ষক আমাদের বাবার বয়সী। তিনি বিভিন্ন সময় আমাদের এমন অশোভনীয় কথা বলেন, যা মুখে আনা যায় না। আমরা এমন শিক্ষকের অপসারণ চাই।”
তবে অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাদিকুল ইসলাম কিরণ। তার দাবি, “বিদ্যালয়ের কয়েকজন সহকারী শিক্ষক ও বহিরাগত কিছু লোক শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়েছে। যারা নিয়মিত প্রাইভেট পড়ান এবং ক্লাসে সময়মতো আসেন না, তারাই আমাকে হেনস্তা করার জন্য এই ষড়যন্ত্র করছে।”

অন্যদিকে, মহিচাইল জোবেদা মমতাজ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আহসান হাবীবের বিরুদ্ধেও রয়েছে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। শিক্ষার্থীরা জানায়, তিনি ৯ম ও ১০ম শ্রেণির ছাত্রীদের শরীরে হাত দেওয়াসহ নানাভাবে কুপ্রস্তাব দিতেন। এমনকি, দু’জন শিক্ষার্থীকে কক্ষে দরজা আটকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, যেসব ছাত্রীর বাবা বিদেশে থাকেন, তাদের মায়েদের বিদ্যালয়ে ডেকে এনে মোবাইল ফোনে কুপ্রস্তাব দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও তুলেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

এই অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আহসান হাবীব বলেন, “গত বছর এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হওয়ায় আমি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করি। এ কারণেই তারা আমার বিরুদ্ধে এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।”

প্রশাসনের বক্তব্য

ঘটনার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আশরাফুল হক জানান, “চান্দিনা ডা. ফিরোজা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” মহিচাইলের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ওই ঘটনাটিও আমরা জেনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে সেখানেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ ঘটনায় পুরো উপজেলায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।